|
|
|
|
|
|
|
মিশন দুর্গাপুজো,
স্টার্ট বসন্তপঞ্চমীতেই |
|
প্ল্যানিং, অর্গানাইজিং, কন্ট্রোল, অ্যাকশন। এই ভাবে তিলে তিলে, ধাপে ধাপে গড়ে ওঠে
থিমপুজোর সংগঠন।
হাতে-কলমের অভিজ্ঞতা জানালেন নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘের প্রেসিডেন্ট অরূপ বিশ্বাস |
আমাদের ক্লাবে পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে সেই সরস্বতী পুজোর দিন। সেই রাতেই মিটিং ডেকে দুর্গাপুজোর ছক ভাবতে বসি। একটা বিষয় খুব খেয়াল করি আমরা। মানুষ পুজোয় ঠিক কী দেখতে চাইছেন। এই ভাবনাটা মাথায় রেখেই থিম বাছাই করি। মিটিঙে দুটো রাজ্যের নাম প্রস্তাব করা হয়। এ বার চারটে পরিবার ওই দুটো রাজ্যে ঘুরতে চলে যায়। এই দলগুলো কিন্তু ওই রাজ্যগুলোর একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে যায়। লোকজীবন, সংস্কৃতি, শিল্প-স্থাপত্য খুঁটিয়ে দেখে। ছবি তোলে, ভিডিয়ো বানায়। আর ওই অঞ্চলের বিশেষ ঐতিহ্য কেমন লাগল, সেই নিয়ে নোটও তৈরি করে ফেলে। কর্তা-গিন্নি, এমন কী পরিবারের খুদে সদস্যটি পর্যন্ত ভাল লাগা-মন্দ লাগা গুছিয়ে লেখে সেই নোটের খাতায়। সবার দৃষ্টিভঙ্গিটাই তো জরুরি।
ফিরে এসে আবার সবাই মিলে বসার পালা। ভিডিয়ো, ছবি, নোটস নিয়ে যুক্তি-তক্কো-গপ্পো চলে অনেক। তার পর সর্বসম্মতিক্রমে একটা বিশেষ রাজ্যকে বেছে নেওয়া হয়। তার পরই নয় জনের একটা দল বেরিয়ে পড়ে লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে। সব কিছু জেনে বুঝে নিয়ে ঠিক করে ফেলে কোন মডেলটা কলকাতায় তৈরি করা হবে। দীর্ঘ গবেষণা শেষে, ওখানকার কিছু স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে ফিরে আসে। রথযাত্রার দিন হয় আমাদের ভিতপুজো।
আমাদের ওই স্পেশ্যাল টিমটা এ বার গিয়েছিল কাশ্মীর। সেখানে থেকে শিখে এসেছে কাচ, কাঠ, সূচ ও ধাতুর অতি সূক্ষ্ম কারুকাজ। যেমন ওদের পশমিনা শাল। কী নিখুঁত! শোনা যায়, ওই কাজ করার পর শিল্পীর নাকি দৃষ্টিশক্তিই নষ্ট হয়ে যায়। ওই শিল্পই এ বার দেখতে পাবে আমাদের মণ্ডপের সিলিংয়ে। আর একটা কথা। কী হচ্ছে, কী ভাবে হচ্ছে, সেটা থাকে নয় জনের মধ্যে। একেবারে মন্ত্রগুপ্তি।
থিমের পুজো দাঁড় করাতে কিন্তু একটা বিশদ পরিকল্পনার প্রয়োজন। তাই, পুজোর ঠিক দু’মাস আগে থেকে আমরা কতগুলো কমিটি তৈরি করি। প্রত্যেক কমিটিতে পঞ্চাশ-ষাট জন সদস্য থাকেন। কমিটিগুলোকে আরও কতগুলো ছোট ছোট দলে ভাগ করা হয়। আর এই এত রকমের টিম, এত রকমের কাজ, সব কিছুর মধ্যে কিন্তু একটা সমন্বয় থাকে। সেটার দায়িত্বেও থাকেন কিছু বিশেষ মানুষ। কে কোন দিন কত ক্ষণ সময় দিতে পারবে, সে সব জেনে-বুঝে নিয়ে তবে কাজের ভাগ বাঁটোয়ারা করা হয়। এই কমিটিগুলোর একটা হল, থিম কমিটি। বিচারকরা যখন আসবেন, তখন তাঁদের গোটা জায়গাটা ঘুরে দেখানো, বিষয়বস্তু ঠিকমতো গুছিয়ে বলা, এই সবই তাঁদের দায়িত্ব। অনেক দিন আগে থেকে বই-ইন্টারনেট ইত্যাদি ঘেঁটে প্রস্তুতি নেন তাঁরা। সকালের দিকটা নিরাপত্তার ভার থাকে এনসিসি প্রশিক্ষিত কর্মীদের ওপর। বিকেলে তাদের থেকে দায়িত্বটা বুঝে নেয় পাড়ার ছেলেরা। আমরা তো আলাদা একটা ফায়ার টিম-এরও ব্যবস্থা রাখি। মাঠে পুজো, তাই প্রচুর বালিও মজুত রাখি, বৃষ্টি হলেও অসুবিধা হয় না তেমন।
পুজোর টিমটার দায়িত্বে থাকেন পাড়ার মাসিমা, প্রণতি আচার্য। ফল কাটা, ফুল-নৈবেদ্য সাজানো, পদ্ম ফোটানো— পুজোর যাবতীয় নিয়ম-কানুন একেবারে হাতে কলমে শিখিয়ে দেন নতুন-পুরনো সবাইকে। আর আছে কালচারাল টিম। গান-বাজনা, মূকাভিনয়, সব কিছুর অনুশীলন চলে পাক্কা তিন মাস ধরে। তবে না এত পুরস্কার! আর আমাদের অ্যানাউন্সমেন্ট কমিটিতে কারা থাকে জানো? একেবারে খুদেরা।
এ বার আমাদের থিম কাশ্মীর, তাই সেখান থেকে এক শিল্পীও আসছেন অনুষ্ঠান করতে। আর এক বিখ্যাত বাঙালি শিল্পী এ বার সুরুচি সঙ্ঘে ছুঁয়ে দিয়েছেন তাঁর জাদু। আমাদের থিম সঙ্গীতটিতে সুর বসিয়েছেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
দ্বাদশীর দিন আমাদের প্রতিমা বিসর্জন হয়। সে দিনই আমাদের সিঁদুর খেলা, সঙ্গে আবিরও। এমন কী পাড়ার বাড়িগুলোয় বিজয়া সে দিনই পালিত হয়। পুজোটাকে কেন্দ্র করে এমনই একাত্ম হয়ে গেছে নিউ আলিপুরের এই পাড়াটা। |
|
|
|
|
|