নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ |
মেঘ ছড়ানো শরতের নীল আকাশ যে এমন নিকষ কালো হয়ে যেতে পারে তা তিনি ভাবেননি কখনও। কখনও ভাবেননি শিউলির গন্ধ মাখা রোদ এত ফ্যাকাশে হয়। আগে হলে বিশ্বাসই করতেন না পুজো এগিয়ে এলে গলায় এক কান্না জমতে পারে। তিন মাস আগের এক সকাল তাঁর পৃথিবীটাই যেন আমুল বদলে দিয়েছে। ২৯ জুন ভোরে নবদ্বীপের এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পবিত্ররঞ্জন সাহা ঘুম থেকে উঠে দেখেছিলেন তাঁর স্ত্রী ও দুই পুত্রের দেহ ঝুলছে একের পর এক। তিন জনেই আত্মহত্যা করেছেন। তিনি জনই তাঁদের সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছিলেন, বড় ছেলের স্ত্রী পায়েল সাহাই তাঁদের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে পায়েলকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বাবাকেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ৬০ দিন জেল হেফাজতে থাকার পরে সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন তাঁরা। তারপরে চলে গিয়েছেন বাবার বর্তমান বাড়ি ওড়িশার বালেশ্বরে। সেখান থেকেই ফোনে পায়েল জানালেন, “পুজো নিয়ে কোনও কথা নয়।”
কিন্তু তাঁর শ্বশুরমশায় পবিত্ররঞ্জনবাবু কিন্তু বরাবরই বলে এসেছেন, “পায়েল ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে সুইসাইড নোটের ওই অভিযোগ মিথ্যা। তাঁরা নির্দোষ।” তাঁর কথায়, “আমরা তো কোনও অভিযোগই করিনি। পুলিশ নিজে থেকে মামলা করছে।” কিন্তু এই শারদীয়া দিবসে তাঁর স্ত্রী মৃদুলাদেবী ও দুই পুত্র সঞ্জয় ও সমরেশ নেই, এ কথা বারবার মনে আসছে। ওই তিন জনের আত্মহত্যা এবং সুইসাইড নোটের দশটি পাতায় তাঁর পুরো জীবনই বদলে গেল।
নাতি-নাতনি আর পুত্রবধূ ছাড়া এই প্রবীণ ব্যবসায়ীর আর কেউই নেই। নবদ্বীপের পোড়া মা তলার প্রাসাদোপম বাড়ি খাঁ খাঁ করছে। সেই বাড়িও ব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক। পবিত্রবাবু বলেন, “আর্থিক সঙ্গতি বলতে আমার আর কিছু নেই।” এক কালে এই বাড়ি ছিল জমজমাট। বাড়িটি দেখতে যেত লোকে। সেই বাড়ি পুজোর দিনে অন্ধকারেই পড়ে রয়েছে। পবিত্রবাবু বলেন, “ঢাকের শব্দ, পুজোর ভিড়, কিছুই আর ভাল লাগছে না। বৌমার উপর থেকে অভিযোগটা কেটে গেলে তবু কিছুটা শান্তি পাব।” তারপর থেমে থেমে বললেন, “যেন জীবন্ত প্রেত হয়ে গিয়েছি আমি। চলে যাব বাড়ি ছেড়ে।” |