সিংহবাহিনীর বিসর্জন
নেই জিয়াগঞ্জে
ষ্টাদশ শতকের কষ্টি পাথরের দেবীদূর্গা, কখনও আবার জগদ্ধাত্রী রূপেও পূজিত হন জিয়াগঞ্জের সিংহবাহিনী মন্দিরে। সেই দেবী দশভূজা। দশ হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা, ত্রিশূল, খড়গ-সহ বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিতা দেবীদুর্গার সিংহের উপরে অধিষ্ঠিতা। পায়ের নিচে অসুর আর অসুরের নিচে মহিষাসুরের কাটা মুণ্ডু। দুর্গাপুজোর সময় ছাড়াও ওই জিয়াগঞ্জের সিংহবাহিনী মন্দিরে সকাল-সন্ধ্যা তাঁর পুজো হয়। এ দিকে ওই দেবীমূর্তিকে ঘিরে নানান কল্পকথা। ‘বালুচর’ অধুনা জিয়াগঞ্জ নিমতলা ঘাটে এক সময় পণ্যবাহী বজরা ও মহাজনী নৌকো এসে ভিড়ত। কোনও এক জনৈক নাবিক বজরা নিয়ে সুতানুটি ফিরছিলেন। সেই সময়ে সিংহবাহিনী দেবীদুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে নিমতলা কালীঘাট থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন। নিমতলায় ভাগীরথীর ঘাটে একটি বিশাল পাথর। পাথরটি পাড়ে তুলতেই ঘাটের মাঝি থেকে সাধারণ মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। প্রায় সাড়ে চার ফুট উচ্চতার নিকষ কালো কষ্টি পাথরের দেবীদুর্গার মূর্তি।
দেবীদুর্গা সিংহবাহিনী। দশ হাতে পাথরের অস্ত্র সজ্জিত। তখন ঘাটের পাশেই ব্রহ্মময়ী কালীবাড়িতে রেখে দেন। সেখানে নিয়মিত পুজো চলতে থাকে। ওই ঘটনার কিছু দিন পরেই বাংলাদেশের রংপুর থেকে আসা নাগা সন্ন্যাসীর দল তারকেশ্বর যাওয়ার পথে এই দেবীমূর্তির কথা জানতে পারেন। তাঁদের দলপতি লুটন মহারাজ সেই মূর্তিকে এনে জিয়াগঞ্জ তিলিপাড়ার পশ্চিম দিকে জঙ্গল ঘেরা একটি স্থানে তন্ত্র মতে পঞ্চমুণ্ডির আসনে প্রতিষ্ঠা করেন। এর বেশ কয়েক বছর পরে ১৯৪৭ সালে স্থানীয় বাসিন্দারা দেবীমূর্তির পুজোর ব্যবস্থার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। যা বর্তমানে জিয়াগঞ্জ সিংহবাহিনী মন্দির ট্রাস্ট।
সুপ্রাচীন মূর্তি। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
ট্রাস্ট কমিটির সম্পাদক ধ্রুবনাথ রায় বলেন, “সেই সময়ে এই ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের উদ্যোক্তা ছিলেন অন্নদাপ্রসাদ অধিকারি। তাঁর ভাইপো বট অধিকারি দেবীমূর্তি পুজোর ভার গ্রহণ করেন। তবে মূর্তির বেদীমূলে পালি ভাষায় কিছু লেখা রয়েছে, যা থেকে অনুমান করা যায় দেবীমূর্তির নির্মাণ কাল। এলাকার দুই সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত মধুসূদন চক্রবর্তী ও মুরলিধর চক্রবর্তী সেই লেখার পাঠোদ্ধার করেন। তাতে পালি ভাষায় লেখা আছে১৬৮৮ শকাব্দ।”
পুজো উপলক্ষে এখন মন্দিরে রং করার কাজ চলছে। পুজোয় আগত ভক্তদের জন্য ম্যারাপ বাঁধাও হচ্ছে। মন্দিরের পুরোহিত পার্থসারথী পণ্ডিত বলেন, “বংশ পরম্পরায় আমাদের পরিবারের সদস্যরা ওই দেবীমূর্তির পুজো করে থাকেন। পঞ্চমীর দিন সকালে ভাগীরথীর জলে দেবীমূর্তি স্নান করানো হয়। ষষ্ঠীর সকাল থেকে রং তুলে অঙ্গরাগ করা হয়। রাতে চক্ষু দান হয়। এর পরে মুকুট ও সোনার অলঙ্কার পরানো হয়।” এক চালার দেবীমূর্তির গায়ে দেওয়া হয় ডাকের সাজ। সঙ্গে বিল্ববৃক্ষের পুজোও হয়। তবে দেবীমূর্তি বিসর্জন হয় না। তার বদলে নবপত্রিকা বিসর্জিত হয় ভাগীরথীর জলে।”
রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “পাল রাজাদের আমল অষ্টম থেকে একাদশ শতক। কিন্তু পাল রাজাদের আমলের ওই মূর্তি নয়। কেননা, অষ্টাদশ শতকের সময় কালের ওই দেবীমূর্তি বাংলা, বিহার ও ওড়িশায় দেখা যায়। স্থানীয় কোনও রাজা বা জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় সেই সময়ে ওই ধরণের দেবীমূর্তি তৈরি হত। ওই মূর্তি তৈরির জন্য বিহারের মুঙ্গের জেলার রাজমহল থেকে নদী পথে ওই পাথর নিয়ে আসা হত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.