|
|
|
|
|
দু’বছর পরে ছন্দে
জঙ্গলমহলের পুজো
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
|
গত দু’বছরের তুলনায় এ বার খানিক অন্য রকম পরিস্থিতি। খুন-রক্ত-সন্ত্রাসের দিনলিপির মাঝেও এ বার কিছুটা হলেও পুজোর পুরনো ছন্দ দেখা যাচ্ছে জঙ্গলমহলে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে লালগড় আন্দোলন শুরুর পর ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠেছিল জঙ্গলখণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা। অশান্তির জেরে ২০০৯ এবং গত বছরে বেশির ভাগ এলাকায় পুজো হয়েছে নমো নমো করে। অশান্তির জেরে গত বার কয়েকটি পুজো হয়ইনি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেলপাহাড়ির বামনুডিহা গ্রামের পুজো। ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর বিজয়া দশমীর পরদিন বামুনডিহা গ্রামে খুন হন তৃণমূল নেতা জলদবরণ কর ও তাঁর ভাই স্থানীয় রেশন ডিলার আশিস কর। এর পর গত বছর বামনুডিহা গ্রামের সর্বজনীন দুর্গাপুজোটি বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর অবশ্য ফের বামুনডিহায় পুজো হচ্ছে।
এক সময়ে মাওবাদী-সক্রিয়তার কেন্দ্র লালগড়ের ধরমপুর কিংবা সিপিএম-বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা বেলপাহাড়ির পচাপানি গ্রামেও গতবারের চেয়ে এ বার দুর্গাপুজো ঘিরে স্থানীয় মহলে উদ্দীপনা লক্ষণীয়। টানা বন্ধ-অবরোধ ও অস্থিরতার কারণে গত বছর গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি ঝাড়গ্রাম শহরেরও বেশ কিছু পুজোর বাজেট ব্যাপক ভাবেই কাটছাঁট করা হয়েছিল। গতবার লালগড় ব্লকসদরের সর্বজনীন পুজোর উদ্যোক্তারা নিয়ম রক্ষার পুজো করেছিলেন। এ বার হীরকজয়ন্তী বর্ষপূর্তিতে লালগড়ের পুজোর উদ্যোক্তারা নাটক ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছেন। ধরমপুর সর্বজনীনের উদ্যোক্তারাও এ বার পুজোর ক’দিন বাউলগান, ছৌ নাচ ও যাত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। তবে লালগড়ের পুজোয় দশমীর রাতে রাবণ পোড়ার অনুষ্ঠানটি নিরাপত্তার কারণে ২০০৯ সালে বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সেই থেকেই তা বন্ধ। লালগড়ের কাকচরাডাঙায় যেখানে আগে রাবণ পোড়ানো হতো, সেখানে এখন সিআরপি-র ক্যাম্প।
মাওবাদী প্রভাবিত অন্য এলাকাগুলিতেও এ বার পুজো আয়োজনে খামতি নেই। বিনপুরের শিলদার একটি ক্লাবের সম্পাদক তথা স্থানীয় সিপিএম নেতা নিহত হওয়ায় গতবার নমো নমো করে পুজো সেরেছিলেন উদ্যোক্তারা। এ বার শিলদার ওই পুজো ঘিরে ফের মেলা বসছে। থাকছে বিচিত্রানুষ্ঠানও। মণ্ডপ ও প্রতিমায় অভিনবত্ব আনার চেষ্টাও হয়েছে। পুজোর বিষয় নির্বাচনে এ বার শান্তির বার্তা দেওয়ার চেষ্টা দেখা গিয়েছে জঙ্গলমহলের পুজো-কমিটিগুলির মধ্যে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়ার একটি পুজোর থিম: ‘জল-জমি-জঙ্গল ও মানবসভ্যতা’। তেমনই জামবনির ব্লকসদর গিধনির একটি পুজোর থিম: ‘বাবুই পাখির বাসা’। বাবুইপাখির মতো জঙ্গলমহলে ‘শান্তির বাসা’ বাঁধার আহ্বান থাকছে মণ্ডপ-জুড়ে। বর্তমান রাজ্য সরকার ও মাওবাদীদের মধ্যে শান্তি আলোচনা নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই গত দেড়মাসে ঝাড়গ্রামে তিন জন (তৃণমূল কর্মী রবীন্দ্রনাথ মিশ্র, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি লালমোহন মাহাতো ও ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি মোর্চার নেতা বাবু বসু) খুন হয়েছেন। তবে, পুজোর আগেই যৌথ বাহিনীর তল্লাশি-টহল মানুষের মনে খানিকটা আস্থা জাগিয়ে তুলতে পেরেছে। এ বার সন্ধেবেলাতেও শহর ও গ্রামাঞ্চলে পুজোর বাজারে কিছুটা প্রাণ এসেছে। গত দু’বছর সব চাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন বস্ত্র ব্যবসায়ীরা। জঙ্গলমহল ছন্দে ফিরতে চাইলেও ব্যতিক্রম নেতাই গ্রাম। গত জানুয়ারিতে চার মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসীর মৃত্যুর জেরে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এ বার নিয়ম রক্ষার পুজো সেখানে। নেতাইয়ের মতো জঙ্গলমহলের স্বজনহারা মানুষজনের অবশ্য পুজো নেই। প্রিয়জনের স্মৃতি-রোমন্থনে ভেসে যাওয়াও এক ‘অন্য পুজো’। |
|
|
|
|
|