|
|
|
|
আগুন কোলাঘাটের ফুল বাজারে |
ভিন্ রাজ্য থেকে এল রজনীগন্ধা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
ফের পুজোর বাজারে ভিন্ রাজ্য থেকে এল ফুল। গত তিন দিন ধরে বেঙ্গালুরু ও পুনে থেকে আকাশপথে রজনীগন্ধা আসছে রাজ্যে ফুলের অন্যতম জোগানদার পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের বাজারে।
বন্যা আর অতিবৃষ্টির জেরে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার ফুল চাষে বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফলে পুজোর মরসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই গাঁদা, রজনী, দোপাটি, অপরাজিতার জোগান কমছিল। বিশ্বকর্মা পুজোর সময় গাঁদা ফুল আনতে হয়েছিল বেঙ্গালুরু থেকে। আর এ বার দুর্গাপুজোর চাহিদা সামলাতে কোলাঘাটের ফুল ব্যবসায়ীরা রজনীগন্ধা ফুল আনলেন বেঙ্গালুরু ও পুনে থেকে। গত শুক্রবার থেকে প্রতি দিন প্রায় ১৫ কুইন্ট্যাল করে রজনীগন্ধা এসেছে কোলাঘাটের ফুল বাজারে। দুর্গাপুজোয় অপরিহার্য পদ্মের দাম অবশ্য এ বারও বেশ চড়া। অন্য বছর ওড়িশা থেকে পদ্ম আসে। এ বছর আমদানি বন্ধ বলে স্থানীয় পদ্মের দাম বেশ চড়া।
এ বার অতিবৃষ্টির জেরে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া, কোলাঘাট ও পশ্চিমের দাসপুর, ডেবরা ব্লকের ফুলচাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বন্যা সামলে স্বল্প সময়ে গাঁদার জোগান কিছুটা বাড়ানো গেলেও টান পড়েছে রজনীগন্ধার চাহিদায়। দ্বিগুণ দাম উঠেছে রজনীগন্ধার। তাই ভিন্ রাজ্য থেকে ফুল এনেও লাভ থাকছে হাতে। তুলনায় গাঁদা, দোপাটির বাজারদর কিছুটা কম।
পঞ্চমী থেকে দশমীতে ফুলের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। একটু বেশি দাম পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন ফুলচাষিরা। রবিবার, ষষ্ঠীর সকালে কোলাঘাট রেলস্টেশন লাগোয়া ফুলবাজারে ছিল চরম ব্যস্ততা। এক দিন আগে শনিবার, এই বাজারে যে গাঁদা ছিল কিলো প্রতি ৪০-৪৫ টাকা, রবিবার তা বেড়ে হয়েছে ৫০-৭০ টাকা। একই ভাবে দোপাটি ১০-২০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০-৬০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম হয়েছে। অপরাজিতা ৭০-৮০ টাকা ছিল। বেড়ে হয়েছে ১০০-১৩০ টাকা। স্থানীয় ঝুরো রজনীগন্ধার দাম শনিবার ছিল প্রতি কিলো ২৫০ টাকা। রবিবার তা বেড়ে হয়েছে। ৩৫০-৪০০ টাকা। ভিন্ রাজ্য থেকে আনা রজনীর শনিবার দাম ছিল ১০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। রবিবার তা বেড়ে হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা।
কোলাঘাট ফুলবাজারের ব্যবসায়ী মোহন পোড়ে রজনীগন্ধা এনেছেন বেঙ্গালুরু থেকে। আর এক ব্যবসায়ী মলিন পাত্র রজনীগন্ধা এনেছেন পুনে থেকে। মলিন, মোহনেরা বলেন, “ওখানে ফুলের দাম কিছুটা কম এখন। তবে, বিমানপথে আনায় ফুলের বহন খরচ অনেক বেশি হয়েছে। তাই খুব বেশি লাভ হবে না।” মোহন জানান, কোলাঘাটের ১৪ জন ব্যবসায়ী প্রতি দিন ফুল নিয়ে আসছেন ভিন্ রাজ্য থেকে। পুজোর শেষ দিন পর্যন্ত এই ভাবে ফুল আমদানি করা হবে।”
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট, পাঁশকুড়া ও হাওড়ার বাগনানে পুকুর, রেললাইনের ধারে জলাজমিতে পদ্ম চাষ হয়। কোলাঘাটের নহলা গ্রামের মোহন মাইতি, বাগনানের কুলগাছিয়ার হারু হাজরা পদ্মের চাষ ও ব্যবসা করেন। মোহন বলেন, “এ বার একে কম পদ্ম হয়েছে। তার উপরে ওড়িশা থেকেও পদ্ম আসেনি। ফলে পদ্মের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শুক্রবার একশোটা পদ্ম ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শনিবার তা ৬০০ টাকায় ও রবিবার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সপ্তমী ও অষ্টমীর দিনে একশো পদ্ম হাজার টাকায় পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে।” বাগনানে রেলের ঝিল লিজে নিয়ে পদ্ম চাষ করেন হারু হাজরা। অষ্টমীর কথা ভেবে মোহনের সঙ্গে হারুও মেচগ্রামের হিমঘরে কয়েক হাজার পদ্ম জমিয়ে রেখেছেন। সব মিলিয়ে অতিবৃষ্টিতে ফুলচাষে ক্ষতি হলেও বাজারদর ভাল থাকায় চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না বলে মত সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের। |
|
|
|
|
|