জঙ্গলমহলে নিরস্ত্র দুর্গা, বরাভয় মুদ্রায় অসুরও |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
অনেক রক্ত ঝরেছে। দেবী তাই নিরস্ত্র। অস্ত্রহীন অসুরও।
অকালে ক্ষয়েছে বহু প্রাণ। আতঙ্কে কেটেছে কত বিনিদ্র রাত। আর নয়। দু’দণ্ড শান্তি খুঁজছে জঙ্গলমহল। সব পক্ষের কাছেই তার সংযত হওয়ারই অনুনয়।
এই আর্তিরই প্রতিফলন এ বার ঝাড়গ্রাম শহরের পুরনো শ্মশানকালী মোড়ের সর্বজনীন পুজোয়। দেবী এখানে নিরস্ত্র। এমনকী অস্ত্র-হীন অসুরও। দু’তরফই বরাভয় মুদ্রায় আবির্ভূত আম-দরবারে। জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক বিন্যাসে কে দেবী আর কে অসুরসে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর দায় নেননি উদ্যোক্তারা। শান্তির খোঁজ করছেন তাঁরা। সবার কাছেই তাঁদের একই প্রার্থনা। |
|
অস্ত্র নেই দুর্গার হাতে। নিরস্ত্র অসুরও। রবিবার ঝাড়গ্রামে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি। |
প্রতিমা দেখলে মনে হবে প্রস্তর-নির্মিত। প্রকৃতপক্ষে থার্মোকল দিয়ে মূর্তিটি বানিয়েছেন ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট শিল্পী সুখময় শতপথী। দেখে মনে হবে ওড়িশি শৈলীতে তৈরি পাথরের প্রাচীন দেবীমূর্তি। দুর্গা ও তাঁর সন্তানদের হাতের বরাভয় মুদ্রা খানিক তির্যক। দুর্গা ও তাঁর সন্তানেরা যেন থামতে বলছেন। একই বার্তা নিয়ে হাজির দেবীর পদতলের অসুরও। শিল্পীর বক্তব্য, “জঙ্গলমহলের শান্তি ফেরানোর জন্য সব মহলেরই সংযত থাকা প্রয়োজন। কোথায় থামা প্রয়োজন, সেটাই বোধহয় ভুলে গিয়েছি।” তাই দেবীর বরাভয় মুদ্রার মধ্যে রয়েছে সংযত থাকারই আবেদন।
সুখময়বাবুর উপলব্ধি, “ইতিহাসের নির্মম শিক্ষা সত্ত্বেও মানুষ হিংস্র শ্বাপদের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে যায় মাঝেমধ্যে। মেতে ওঠে রক্তের খেলায়। সত্যিই কি আমরা অশান্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইছি?” তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এই প্রশ্নই তুলেছেন শিল্পী। শান্তি ফেরানোর বার্তা রেখেছেন। “পাথরেও পদ্মফুল ফোটানো যায়”, বলছেন সুখময়। ‘অরণ্যসুন্দরী সর্বজনীন’ নামে এই নতুন পুজোটির উদ্যোক্তা স্থানীয় রাখিবন্ধন উৎসব কমিটি। সেখানেই দেখা যাবে সুখময়বাবুর প্রত্ন-প্রতিমা। প্রথম বছরের পুজোর মণ্ডপ-সজ্জাতেও অভিনবত্বের ছাপ রাখছেন উদ্যোক্তারা। প্রয়াত শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের ছবির কোলাজ দিয়েই সম্প্রীতির ভাবনায় মণ্ডপের ভিতর-বাইরের অঙ্গসজ্জা হয়েছে। হুসেনের ছবিগুলির অনুকৃতি করেছেন সুখময়বাবু।
মহাষষ্ঠীর দিন পুজোর উদ্বোধন করলেন প্রবীণা সুমিত্রা জাল। জঙ্গলমহলের দু’বছরের অশান্তির দরুন বাড়িঘর হারিয়ে সুমিত্রাদেবী এখন ভিখারিনি। উদ্বোধক হিসাবে তাঁর নির্বাচনও প্রতীকী। জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি আর প্রত্যাশারই প্রতীক সুমিত্রাদেবীরা। |
|