নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মনসুর আলি খান পটৌডির মৃত্যুর পর ঠিক দশ দিন কেটে গিয়েছে। এই প্রথম পটৌডির মৃত্যু নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন তাঁর প্রিয় শিষ্য। তিনি--গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। রবিবার সল্ট লেকের সি জে ব্লকের পুজোর উদ্বোধনে এসে পটৌডিকে নিয়ে বলার সময় রীতিমতো আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন বিশ্বনাথ। এর আগেও দু’বার এখানে এসেছেন তিনি। কিন্তু কোনও বার কিছু বলতে চাননি। এ দিন সল্টলেকের পুরপ্রধান কৃষ্ণা চক্রবর্তীর অনুরোধে এক মিনিট নীরবতা পালনের পরই বিশ্বনাথ নিজে থেকেই বলেন, তিনি পটৌডিকে নিয়ে কিছু বলতে চান। তার পরই স্বভাবসিদ্ধ নরম গলায় বললেন, “পটৌডির মৃত্যুর দিন আমি বেঙ্গালুরু থেকে অনেক দূরে ছিলাম। এতটাই প্রত্যন্ত অঞ্চল যে পরে সেখান থেকে আর শেষকৃত্যে যেতে পারিনি। তার জন্য অত্যন্ত যন্ত্রণাকাতর হয়ে পড়েছিলাম।”
এর পর নিজের সাফল্যের পিছনে পটৌডির অবদানের কথা তুলে আনেন ভিশি। বলেন, “সবাই আমার স্কোয়ার কাটের কথা বলে। কিন্তু প্রায় কেউই জানে না, এই শটটার পিছনে পটৌডির অবদানের কথা। আমি যখন প্রথম ভারতীয় দলে ঢুকি, তখন উনি বলেছিলেন, তুমি বড্ড রোগা। ভাল কাট মারতে গেলে কনুই আরও মজবুত করতে হবে। পটৌডির পরামর্শ মতো আমি দুশো বালতি করে জল তুলতে থাকি। যার ফলও পেয়েছিলাম। |
সল্টলেকে সি জে ব্লকের পুজোর উদ্বোধনে এসে পটৌডির
স্মৃতিতে নীরবতা পালন বিশ্বনাথের। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
কনুই মজবুত হয়ে গিয়েছিল।” পটৌডির সঙ্গে বিশ্বনাথের শেষ দেখা হয়েছিল বছরখানেক আগে গায়কোয়াড়ের বাড়ির বিয়ের অনুষ্ঠানে। “অনেক গল্প হয়েছিল তখন,” স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন বিশ্বনাথ, “পরে ইংল্যান্ড সিরিজের সময় টিভি-তেও দেখি। ভাবতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি উনি চলে যাবেন। ওঁর মতো ক্যারিশমা আমি ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেও কারও মধ্যে দেখিনি।” কথায় কথায় এল জীবনের প্রথম টেস্টও। ’৬৯-এ বিল লরির অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কানপুরে জীবনের প্রথম টেস্ট ইনিংসে ০ করে ফেরার পরে ভেঙে পড়েছিলেন বিশ্বনাথ। তখন কর্নাটকি তরুণ পাশে পেয়েছিলেন তাঁর প্রথম ক্যাপ্টেনকে। বলছিলেন, “০ করার পরে পটৌডি আমাকে বলেছিলেন, রিল্যাক্স। ওই কথাটুকুই যথেষ্ট ছিল। এখন আর আমাকে ‘রিল্যাক্স’ বলার কেউ রইল না।”
পটৌডির কথা বলতে গিয়ে বিশ্বনাথ টেনে আনেন ইডেন প্রসঙ্গও। “আমি ওঁর মতো বাংলার মেয়ে বিয়ে করিনি ঠিকই, কিন্তু ইডেনের সঙ্গে আমার অনেক দিন আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাই আমিও এক রকম বাংলার জামাই। তাই আর এক বাংলার জামাই সম্পর্কে এটাই বলব যে ওঁর সম্পর্কে লোকের একটা ভুল ধারণা ছিল। সবাই মনে করত, পটৌডি বুঝি খুব নাক উঁচু। কারও সঙ্গে বিশেষ মেশে-টেশে না। আসলে কিন্তু সেটা ঘটনা নয়। লোকে ওঁকে ভুল বুঝত। পটৌডির সঙ্গেই ঠিক মতো মিশতে পারত না।” |