নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দিন বদলেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। রোজ সকাল হলেই ব্যস্ততা। রাস্তায় যানজট। মানুষের ভিড়। পুরনো পাড়াগুলোও কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে। সবুজ কমে আসছে চার দিকে। সে নিয়ে হা-হুতাশের পর্যন্ত সময় মেলে না।
নগরজীবনের এই ব্যস্ত, যান্ত্রিক, দমবন্ধ পরিবেশে এক টুকরো ‘মুক্তি’ হয়ে আসে পুজো। পুজোর হাত ধরেই শহরে প্রাণ পায় এক টুকরো গ্রাম। যেন ফেলে আসা দিনও। ক’বছর ধরেই শহরের পুজোর ‘থিমে’ উঠে আসছে গ্রামের ছোট জনপদ। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মেদিনীপুর-খড়্গপুর, দুই শহরের একাধিক পুজোতেই গ্রামের ছোঁওয়া। কোথাও মণ্ডপ হচ্ছে কুঁড়েঘরের আদলে। কোথাও আবার দুর্গাকেই দেখা যাবে গ্রামের বধূর বেশে। |
মেদিনীপুর শহরের লোকনাথপল্লি সর্বজনীন পুজোর এ বার ১৪ তম বর্ষ। বাজেট বেশি নয়। ছোট বাজেটের মধ্যেই নতুন কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেন উদ্যোক্তারা। এ বার যেমন পুজোর ক’দিন এখানে দেখা যাবে বাঁকুড়ার জঙ্গলঘেরা ছোট এক জনপদ পাঁচমুড়া। এই গ্রামের অনুকরণেই হচ্ছে মণ্ডপসজ্জা। পাঁচমুড়ার টেরাকোটার কাজ দেশের বাইরেও সমাদৃত। সবুজে-ঘেরা টেরাকোটা গ্রামটিই এ বার লোকনাথপল্লির ‘থিম’। পুজোর ক্যাচলাইনেও নতুনত্ব--‘গ্রাম বাংলার মাটির টানে, উমা এল মর্ত্যধামে’। পুজো কমিটির সম্পাদক জীবন দে-র কথায়, “পুজো-মণ্ডপে আমরা গ্রামটির আথর্র্-সামাজিক পরিস্থিতি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আশা করি, দর্শকদেরও ভাল লাগবে।” কমিটির অন্যতম সদস্য কমলকৃষ্ণ মাইতি-র কথায়, “গ্রামের শান্ত, সবুজ, খোলামেলা পরিবেশ কার না মন টানে? কিন্তু শহরে তো তেমনটা মেলে না। পুজোর হাত ধরেই যদি গ্রামে ফেরা যায়, মন্দ কী!”
শহরের কোতোয়ালিবাজার সর্বজনীনেও গ্রামের পরিবেশ উঠে আসছে। রাস্তার পাশে ছোট জায়গা। এর মধ্যেই এক টুকরো গ্রামের ছবি তুলে ধরতে তৎপরতা এখন তুঙ্গে। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে খড়ের আট চালার অনুকরণে। থাকছে তুলসী মঞ্চ, গোয়ালঘর, ধান ভাঙার ঢেঁকি। প্রতিমাও বধূ-বেশে। এই পুজোর এ বার ৩৭ তম বর্ষ। পুজো-কমিটির অন্যতম সদস্য কৌশিক পাল বলেন, “পুজোর ক’দিন শহরের মানুষকে কিছু সময়ের জন্য অন্তত শিকড়ে ফেরাতেই এই উদ্যোগ।” শহরের বিধাননগর (পূর্ব) সর্বজনীনের ‘থিম’ও একটু অন্য রকম। এ বারই তাদের পুজো শুরু হচ্ছে। মঙ্গলঘটের অনুকরণে হচ্ছে মণ্ডপ। আর প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে মাটির খুরি, হাঁড়ি, সরা, প্রদীপ। নতুনত্ব থাকছে শহরের অলিগঞ্জ সর্বজনীনের প্রতিমাতেও। এখানে দেবী ‘রাজবধূ’। এই পুজোর এ বার ৪১ তম বর্ষ। প্রতিমার সঙ্গে মিল রেখে পুরনো দিনের প্রাসাদের একটি অংশের আদলে হচ্ছে মণ্ডপ। রেলশহর খড়্গপুরের একাধিক পুজোতেও ফিরছে গ্রামীণ-পরিবেশ। যেমন, ইন্দা রেলওয়ে কলোনি আমরা ক’জনের পুজো। এই পুজোরও এ বার ৪১ তম বর্ষ। মণ্ডপ জুড়ে গ্রামের পরিবেশ। প্রতিমা একচালার, সাবেকি।
সব মিলিয়ে দুই শহরেই পুজোয় ফিরছে টুকরো-টাকরা গ্রাম। |