|
|
|
|
পুজোর থিমে আগ্রা ফোর্ট থেকে অমরনাথ |
নুরুল আবসার • বাগনান |
আগ্রা দুর্গ, তুষারতীর্থ অমরনাথ, লাল মাটির দেশ, পাহাড়। রকমারি থিম নিয়ে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে বাগনান প্রস্তুত। এ সবের বাইরে অন্যরকম বৈচিত্র্য দেখা যাবে প্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরিতেও। দু’মাস ধরে তিল তিল করে শিল্পী গড়ে তুলেছেন নারকেলের প্রতিমা। কোথাও গড়া হয়েছে বাঁশের কঞ্চির মণ্ডপ।
বাগনান সর্বজনীন পুজোর আয়োজনে জেলায় উল্লেখযোগ্য স্থানের দাবিদার হয়ে উঠছে। কম পরিসরের মধ্যে এত বেশি দুর্গাপুজো জেলার অন্য মফস্সল শহরে খুব একটা দেখা যায় না। পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, ট্রেন ও সড়ক পথে জেলার অন্যান্য অংশের সঙ্গে বাগনানের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ। ফলে এখানে পুজো দেখতে আসা বেশ সুবিধাজনক। দর্শনার্থীদের চাহিদা মেনেই তাঁরা প্রতি বছর নতুন কিছু করে দেখানোর তাগিদ অনুভব করেন বলে উদ্যোক্তাদের দাবি।
বাগনান জাতীয় সঙ্ঘের এ বারের মণ্ডপ হয়েছে আগ্রা ফোর্টের আদলে। বাগনান লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে পোড়ামাটির রঙের বিশাল দুর্গ রেলযাত্রীদের পর্যন্ত নজর কাড়ে। মণ্ডপের ভিতরেও রয়েছে কারুকাজ। প্রতিমা এবং আলোকসজ্জা আকর্ষণীয়। উদ্যোক্তাদের দাবি, যাঁরা সত্যিকারের আগ্রা ফোটর্র্ দেখেছেন তাঁরা আসলের সঙ্গে ফারাক ধরতে পারবেন না।
খালোড় দক্ষিণ পল্লির এ বারের থিম হল তূষারতীর্থ অমরনাথ। থিমের বৈচিত্র্যে দক্ষিণ পল্লি বরাবর সুনাম বজায় রেখেছে। তৈরি হয়েছে অমরনাথের দুর্গম রাস্তা। তার ভিতর দিয়ে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতায় উঠলে দেখা পৌঁছনো যাবে গুহার ভিতরে শিবলিঙ্গে। সেই গুহা অতিক্রম করে যাওয়া যাবে মূল মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনে। এখানে প্রতিমা কুমারটুলির।
বেড়াবেড়িয়া মিলন সঙ্ঘের এ বারের থিম হল লাল মাটির দেশে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর মূলত এই সব জেলার আদিবাসীদের শিল্পচর্চার পদ্ধতিকে তুলে ধরা হয়েছে এই পুজোর ভাবনায়। আদিবাসীরা মাটি, কাঠ এবং খড় ব্যবহার করেই তাঁদের শিল্প ভাবনা প্রকাশ করেন। সেইসব উপকরণ ব্যবহার করেই এই মণ্ডপে তৈরি হয়েছে নানা শিল্পকর্ম।
সম্প্রতি দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ি এলাকায় হয়ে গেল ভূমিকম্প। অথচ বাঙালির ভ্রমণ তালিকায় অনিবার্য ভাবেই থাকে পাহাড়। ভূমিকম্পের জন্য পাহাড়ের প্রতি মানুষের যেন আস্থা না-কমে সেই কারণেই বাগনান টাউন ক্লাবের এ বারের পুজোর থিম হল পাহাড়। কৃত্রিম রোপওয়ে থাকছে।
বাগনান চিলড্রেন সায়েন্স অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটি গড়েছে নারকেলের প্রতিমা। নারকেল, ছোবড়া এমনকী, নারকেল গাছের মাথার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়েছে দুর্গাপ্রতিমা। চালচিত্র-সহ যার উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট। প্রতিমায় কোনও রঙ ব্যবহার করা হয়নি। শুধুমাত্র বার্নিস দিয়ে পালিশ করা হয়েছে। এই প্রতিমা তৈরি করেছেন শ্যাম জানা ওরফে ছোটু। নিরক্ষর ছোটু হাওড়ার একটি লোহার কারখানায় কাজ করেন। চিলড্রেন সোসাইটিরই সদস্য ছোটু গত দু’মাস ধরে কারখানা থেকে ফিরে রাত জেগে তৈরি করেছেন এই দুর্গাপ্রতিমা। পুজোর আয়োজকদের মধ্যে রয়েছেন হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের যুবকেরা। বিষয়-বৈচিত্র্যের জন্য তাঁদের মণ্ডপ ও প্রতিমা দর্শকদের আকর্ষণ করবে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের।
অন্য দিকে, বাগনান শুভশক্তি সঙ্ঘ তৈরি করেছে কঞ্চির তৈরি মণ্ডপ। মণ্ডপটির পরিসর ছোট। কিন্তু শিল্পকর্ম দেখার মতো। আর রয়েছে বাগনান ব্যবসায়ী সমিতি (উত্তর)-এর পুজো। বাগনানের অন্যতম প্রাচীন সর্বজনীন পুজো এটি। বাগনান স্টেশন রোডকে আলোকমালায় সাজিয়েছে তারা। সেই আলোর দ্যুতিতে একাকার হয়ে গিয়েছেন জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। |
|
|
|
|
|