এক টুকরো স্বপ্ন! শিকড় উপড়ে গিয়েও শিকড়ের কাছে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা নতুন প্রজন্মের সামনে।
দিল্লির দুর্গাপুজোয় আড়ম্বর কলকাতার তুলনায় কম হতে পারে। কিন্তু আন্তরিকতায় দশ গোল দিতে পারে কলকাতাকে। না হলে কেনই বা রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষে নয়ডার বুকে উঠে আসবে এক টুকরো জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি? কেনই বা রাজধানীর এই গতিময় জীবনেও উদ্যোক্তারা নাওয়া-খাওয়া ভুলে পুজোয় মেতে যাবেন?
রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষে পিছিয়ে নেই নয়ডার সেক্টর ৫০-এর সপ্তর্ষি সঙ্ঘ। তাদের এ বারের থিম রবীন্দ্রনাথ। মণ্ডপটিকে ঠাকুরবাড়ি হিসেবে সাজিয়েই ক্ষান্ত হননি উদ্যোক্তরা। নবীন প্রজন্ম, যাঁদের জন্ম-কর্ম দিল্লিতেই, তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন রবীন্দ্র ভাবধারাকে।
মণ্ডপের ভিতরে টাঙানো রয়েছে রবীন্দ্রকাব্য ও রচনার নির্বাচিত অংশ। সাগ্রহে স্থানীয় বাসিন্দারাই ক্যানভাসে তুলে ধরেছেন রবীন্দ্র চিত্রাবলি। অন্যতম উদ্যোক্তা নন্দিনী ভট্টাচার্য বললেন, “স্বপ্নটিকে বাস্তবে রূপ দিতে নবীন প্রজন্ম এগিয়ে এসেছে। এরা আগ্রহের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে চেষ্টা করেছে। এটাই লক্ষ্য ছিল।” রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক সমাজ-সংস্কৃতিকে নারী চরিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে এক অভিনব চেষ্টা চালিয়েছে সপ্তর্ষি সঙ্ঘ। অতীত ও বর্তমানের ফিউশন ঘটিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ‘ফ্যাশন শো’-এরও। |
নয়াদিল্লির একটি পুজোয়। —নিজস্ব চিত্র |
রবীন্দ্রনাথের নারী চরিত্রকে বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রাসঙ্গিক ভাবে উপস্থাপনা করার সাহস অন্তত দেখিয়েছেন নন্দিনী বা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। থিম রবীন্দ্রনাথ যেমন রয়েছে, তেমনই এক টুকরো অজন্তা-ইলোরা তৈরি হয়েছে ময়ূর বিহারের (ফেজ-১) মিলনী কালচারাল ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের পুজোয়। হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পাওয়া অজন্তা-ইলোরার গুহা, ভিতরের প্রস্তর মূর্তি কিংবা শিল্প কর্ম, সবই ভীষণ ভাবে জীবন্ত এখানে। উদ্যোক্তা তপন রায় বলেন, “যাতে এই ধরনের জায়গাগুলি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, সে জন্যই এই প্রচেষ্টা।” থিম পুজোয় প্রতি বছর অভিনবত্ব আনার চেষ্টা করে সফদরজঙ এনক্লেভের মাতৃ মন্দির পুজো কমিটি। এ বছর তাদের মণ্ডপ কাচ দিয়ে। গুজরাতি ঘরানায়। বাঙালির দুর্গা পুজোর ধুনুচি নাচ ও গুজরাতিদের ডান্ডিয়া সবই চলছে এক ছাদের তলায়।
সাবেক ধাঁচের পুজোও কিন্তু কিছু কম হয় না দিল্লিতে। গত ২২ বছর ধরে চলা সাহাদ্রার মানসরোবর পুজো কমিটিই হোক বা বিনয়নগর পুজো কমিটি বা করোলবাগ পুজো সমিতি সকলেরই আন্তরিকতা দেখার মতো। ভোগ খাওয়ার জন্যও এই পুজোগুলিতে প্রবল ভিড় হয়। সর্বোপরি রয়েছে চিত্তরঞ্জন পার্কের পুজোগুলি। মিলন সমিতির পুজো শেষ বেলায় অনুমতি পেয়েছে। তাদের মেলায় জাঁকজমক অন্য বারের তুলনায় কিছুটা কম। তবে পিছিয়ে নেই অন্য পুজোগুলি। চিত্তরঞ্জন পার্কেরই পকেট-৪০-এর নব পল্লি পুজো সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখানে যে সাত-আটটা পুজো হয়, তার মধ্যে কে কাকে টেক্কা মারবে, সেই প্রতিযোগিতা সব সময় থাকে।” |