দারিদ্রসীমার নতুন সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করলেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সোমবার এ নিয়ে কমিশনের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকও করতে পারেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশের সঙ্গে।
গত মাসেই দারিদ্রসীমার নয়া সংজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়েছিল যোজনা কমিশন। সেখানে তারা জানায়, গত জুনের মূল্য সূচকের নিরিখে শহরাঞ্চলে দৈনিক যাঁরা ৩২ টাকা এবং গ্রামাঞ্চলে ২৬ টাকাও খরচ করতে সক্ষম নন, তাঁরাই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী বলে চিহ্নিত হবেন। অর্থাৎ, শহরে বাস করা পাঁচ জনের একটি পরিবার যদি মাসে ৪৮২৪ টাকা (গ্রামের ক্ষেত্রে ৩৯০৫ টাকা) খরচ করতে না পারে তা হলে বিপিএল তালিকাভুক্ত হবে এবং সরকারি সুবিধা পাবে। এই হিসেব অনুযায়ী, দেশে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীর সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪০ কোটি ৭৪ লক্ষ।
নতুন মাপকাঠি নির্ধারণ করার পিছনে কমিশন কর্তাদের যুক্তি ছিল, অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে সরকারি সুবিধা দিতে হলে দারিদ্র দূরীকরণের মূল কর্মসূচিই ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু যে মাপকাঠিতে এই সংজ্ঞা স্থির করা হয়েছে, তা নিয়ে সরকারি এবং রাজনৈতিক স্তরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কংগ্রেসের অন্দরেও তোলপাড় শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, রাহুল গাঁধীও এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন এবং পরিষদকে দারিদ্রসীমার এই নয়া সংজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করতে বলেন। |
দারিদ্রসীমার প্রস্তাবিত সংজ্ঞা নিয়ে কমিশনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানান সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অরুণা রায় ও হর্ষ মন্দার। আরও এক ধাপ এগিয়ে পরিষদের আর এক সদস্য এন সি সাক্সেনার অভিযোগ, দিনে ৩২ টাকার ওই ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া নিতান্তই অমানবিক। কারণ এই টাকায় কোনও মানুষ নয়, একমাত্র পশুই বেঁচে থাকতে পারে। তাঁর দাবি, “বরং যাঁরা ৩২ টাকারও কম খরচ করেন তাঁদের দরিদ্রতম হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে।”
পরিষদের সিদ্ধান্ত জনমানসে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, এই আশঙ্কায় গত কালই এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অম্বিকা সোনি। এই সংজ্ঞা পরিবর্তন হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন যে এটা যথেষ্ট বাস্তবসম্মত নয়। আমরা এই ব্যাপারে পরিষদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। পরিষদ জানিয়েছে, বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। অন্য ভাবেও হিসেব করা যেতে পারে।” |