রাজধানীর বুকে ফের এক দফা অনশন আর ধর্না ঘুম কাড়ল কংগ্রেসের।
পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে কেন্দ্রের ওপর চাপ বাড়াতে এ বার দিল্লি-দরবারে ধর্নায় বসে পড়লেন তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস)-র নেতা চন্দ্রশেখর রাও। প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের সিংহের উদ্দেশে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, সাত বছর আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল কংগ্রেস, টালবাহানা ছেড়ে কেন্দ্র এ বার তা রূপায়ণ করুক।
স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তি ও দোটানায় কংগ্রেস। কারণ, প্রতিশ্রুতি পালন যে কংগ্রেস করতে পারেনি তা পরিষ্কার। আবার প্রতিশ্রুতি পালন করতে গেলে বাকি অন্ধ্রপ্রদেশ উত্তাল তো হবেই, পৃথক রাজ্যের দাবি নতুন করে মাথা চাড়া দেবে গোর্খাল্যান্ড থেকে বিদর্ভের মতো বহু জায়গায়। তবে কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, গত কুড়ি দিন ধরে তামাম তেলেঙ্গানায় তুমুল অসন্তোষ ও অচলাবস্থার পর এ বার বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় বসেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। কেন না শুধু তেলেঙ্গানার কংগ্রেস নেতারাই নন, জাতীয় স্তরের কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশও এখন মনে করছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পৃথক রাজ্য গঠন করা ছাড়া বিশেষ উপায়ও দেখা যাচ্ছে না। এমনকী কমিশন-কমিটি গঠন করে সময় কেনার কৌশলও আর কাজে আসছে না। দলীয় সূত্রের খবর, এই অবস্থায় দু’টি নয়া কৌশল বিবেচনা করা হচ্ছে। এক, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সব রাজনৈতিক দলকে ফের দিল্লিতে ডেকে আলোচনা করা। অথবা, দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিটি গঠন নিয়ে জাতীয় স্তরে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসা। |
পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের দাবি অর্ধ শতাব্দীরও বেশি পুরনো। ষাটের দশকে ইন্দিরা গাঁধী যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন থেকে তেলেঙ্গানার বহু মানুষ এই দাবি করছেন। হালফিলে পৃথক রাজ্যের দাবি পূর্ণ উদ্যমে মাথা তোলে ২০০৪ সালে। সে বছর অন্ধ্রপ্রদেশে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের আগে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির সঙ্গে জোট বেঁধে রাজ্যে ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস। শর্ত ছিল একটাই, কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ করবে কংগ্রেস। কিন্তু পাঁচ বছর অন্ধ্রে শাসন |
চন্দ্রশেখর রাও |
|
করার পরেও যখন সে কাজ এক ইঞ্চিও এগোয়নি, জোট ভাঙে টিআরএস। সেই সঙ্গে ২০০৯-এর নভেম্বরের শেষে অনশনে বসে পড়েন চন্দ্রশেখর রাও। বেগতিক দেখে অনশনের ১১ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ৯ ডিসেম্বর রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম জানিয়ে দেন, পৃথক রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া এ বার শুরু হবে। কিন্তু সেই ঘোষণার পর দিন থেকেই বাকি অন্ধ্রপ্রদেশে আগুন জ্বলে ওঠে। ফলে ফের পিছু হটে কংগ্রেস।
গত দু’বছর ধরে তেলেঙ্গানার সেই আগুন জ্বলছেই। টিআরএস-এর পাশাপাশি মাওবাদীরাও স্থানীয় মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। রাজনৈতিক অস্তিত্ব রাখতে এখন কেশব রাও, হনুমন্ত রাও, মধুযাক্ষী গৌড়ের মতো তেলেঙ্গানার কংগ্রেস নেতারাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তেলেঙ্গানার সব ক’টি দলের সম্মিলিত আন্দোলনে গত কুড়ি দিন ধরে হায়দরাবাদ-সহ ১১টি জেলায় সব কিছু স্তব্ধ। যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহও বিপর্যস্ত।
তেলেঙ্গানা অচল করার পর শুক্রবার রাতে দিল্লি চলে এসেছেন চন্দ্রশেখর। আজ তিনি রাজঘাটে প্রতীকী অনশনে বসেন। সেই সঙ্গে জানান, প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক না করে তেলেঙ্গানায় ফিরবেন না। দেখা করবেন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের সঙ্গেও। কিন্তু প্রশ্ন হল, চন্দ্রশেখরকে কী জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের নেতারা? কেন না কী অবস্থান নেওয়া হবে, তা নিয়েই বিভ্রান্ত কংগ্রেস। এই বিভ্রান্তির কারণেই কৌশলে চন্দ্রশেখরের সঙ্গে বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। পুজোর পর তিনি দিল্লি ফিরে ফের তেলেঙ্গানা নিয়ে সরকারের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। তার পরেই চন্দ্রশেখরের মুখোমুখি হতে চান তিনি।
তবে কংগ্রেস কোনও নির্দিষ্ট অবস্থান না নিলে চন্দ্রশেখরই লাভবান হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কেন না তেলেঙ্গানার নেতা হলেও ২০০৯ সালের লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বিশেষ কোনও সাফল্য পাননি তিনি। প্রয়াত কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডি তেলেঙ্গানা অঞ্চলে উন্নয়নের পাশাপাশি মাওবাদী সমস্যাও কমিয়ে ফেলতে পেরেছিলেন। কিন্তু ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাজশেখরের মৃত্যুর পর ফের মাথা তোলেন চন্দ্রশেখর। কংগ্রেসের নেতৃত্বের অভাব ও অন্তর্কলহ তাঁকে সেই সুযোগ করে দেয়। এখন ফের তেলেঙ্গানায় রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপনের স্বপ্ন দেখছেন চন্দ্রশেখর।
কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেয় এখন সেটাই দেখার।
|
ছাত্রী আত্মঘাতী
সংবাদসংস্থা • হায়দরাবাদ |
পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে আত্মহত্যা করলেন আর এক ছাত্রী। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ডি ভবানী নামের প্রথম বর্ষের এই ছাত্রী হায়দরাবাদের কাছেই কোহেদা গ্রামে নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে গায়ে আগুন দেন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘরের দরজা ভেঙে উদ্ধারের আগেই ছাত্রীটি মারা যান। ঘরের দেওয়ালে ভবানী লিখে যান, পৃথক রাজ্য গড়তে কেন্দ্রের টালবাহানার প্রতিবাদ জানাতেই স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিচ্ছেন তিনি। তেলেঙ্গানা-পন্থী ছাত্র সংগঠনের দাবি, এ নিয়ে অন্তত ৬০০ জন পৃথক রাজ্যের দাবিতে আত্মহনন করলেন। এঁদের অধিকাংশই পড়ুয়া। |