অস্ত্রোপচারের পরে আজ প্রথম বার জনসমক্ষে এলেন সনিয়া গাঁধী।
মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর জন্মদিনে রাজঘাটে তাঁর সমাধিস্থলে পূর্ব ঘোষণা মতোই এলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। পরনে সাদা জমির উপরে আকাশি বুটি দেওয়া ঢাকাই শাড়ি। ছিমছাম, অনাড়ম্বর। গাঁধী সমাধিস্থল বা শক্তিস্থলে অবশ্য বরাবর এমন অনাড়ম্বর সাজেই উপস্থিত হন তিনি। কিন্তু আজকের কৌতূহল ছিল অন্য। শরীরে অস্ত্রোপচারের পরে প্রায় দু’মাস অতিবাহিত। কেমন আছেন সনিয়া? কতটা সুস্থ?
রাজঘাটে উপস্থিত এক কংগ্রেস নেতার কথায়, “আগের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন দলনেত্রী। তবে চোখমুখে এখনও কিছুটা ক্লান্তির ছাপ রয়েছে। বড় কোনও অস্ত্রোপচারের ধকল সামলাতে অবশ্য কিছু দিন সময় তো লাগেই।” দু’দিন আগে ১০ জনপথে গিয়ে দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করে এমনটাই জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের এক নেতাও।
গত কাল রাত অবধি ঠিক ছিল, রবিবার সকাল সাতটা নাগাদ সনিয়া যখন রাজঘাটে আসবেন, তখন প্রধানমন্ত্রী বা কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সেখানে থাকবেন না। সনিয়া চলে যাওয়ার পরেই অন্যরা আসবেন। খুব অল্প সময়ের জন্য সনিয়ার আসার কথা ছিল। তা-ও অত্যন্ত কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। তা এতটাই যে, চিত্র সাংবাদিকরাও সেখানে ঢুকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। দীর্ঘদিন পরে প্রকাশ্যে সনিয়া গাঁধীর ছবি তোলা নিয়ে চিত্র সাংবাদিকদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে এ নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত দরবারও করেন চিত্র সাংবাদিকরা। |
আবার তিনি জনসমক্ষে।
রবিবার রাজঘাটে। |
এ দিন সকালে অবশ্য দেখা গেল, কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকলেও সে রকম বাড়াবাড়ি কিছু করা হয়নি। রাজঘাটে ওই অনুষ্ঠানে সনিয়ার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী কমল নাথ। ছিলেন প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীও। রাজঘাটে প্রায় কুড়ি মিনিট ছিলেন সনিয়া। অনুষ্ঠানের পরে তাঁকে আডবাণীর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় এবং আলোচনা করতেও দেখা যায়।
জনসমক্ষে এ ভাবে সনিয়াকে শেষ দেখা গিয়েছিল তাঁর বাংলাদেশ সফরে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ২৫ ও ২৬ জুলাই ঢাকা সফরে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। কিন্তু তার পরেই অগস্টের একেবারে গোড়ায় তিনি অস্ত্রোপচারের জন্য আমেরিকায় চলে যান। কংগ্রেস বা ১০ জনপথের তরফে ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ বলে তাঁর অসুস্থতার কারণ জানানো না হলেও এটুকু বলা হয় যে, ৪ অগস্ট দলনেত্রীর অস্ত্রোপচার হয়েছে আমেরিকার একটি হাসপাতালে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফিরে আসেন সনিয়া। তার পর কংগ্রেস সভানেত্রী হিসেবে দশ জনপথে প্রথম বৈঠক করেন ১৫ সেপ্টেম্বর। কংগ্রেস সূত্রে সে দিনই বলা হয়, গাঁধী জয়ন্তীতে রাজঘাটে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে জনসমক্ষে আসবেন কংগ্রেস সভানেত্রী।
পরে কংগ্রেস মুখপাত্র রেণুকা চৌধুরী বলেন, “অস্ত্রোপচারের পরে সনিয়া আজ যে ভাবে জনসমক্ষে এসেছেন, তাতে সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা উচ্ছ্বসিত।” তিনি জানান, কংগ্রেস সভানেত্রী যে দল ও সরকারের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রীতিমতো বৈঠক ও আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন, সেই বার্তা সংবাদমাধ্যমের হাত ধরেই ছড়িয়ে পড়েছে। এই বার্তাও পৌঁছেছে যে, দলের সমস্যা সামাল দিতে তিনি কী ভাবে হাল ধরছেন। তার মধ্যেই আজ তাঁকে এ ভাবে প্রকাশ্যে দেখার পরে দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে। |
লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় সনিয়া গাঁধীর। রাজঘাটে মোহনদাস গাঁধীর জন্মদিনে। |
দলের আর এক নেতার কথায়, “গত কয়েক দিন ধরে সনিয়া ১০ জনপথের বাইরে অনেক বারই গিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল ও লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারের বাসভবনে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন। বেশ কয়েক বার মেয়ে প্রিয়ঙ্কা বঢরার বাড়িতেও গিয়েছেন।” দশ জনপথ সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, সনিয়ার অস্ত্রোপচার সফল হলেও চিকিৎসকরা তাঁকে যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। ডিসেম্বরে তাঁকে আবার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, সনিয়া যেন জানুয়ারি পর্যন্ত কোনও অনুষ্ঠানে না যান। তাই তিনি এখন কোনও অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করছেন না। তবে কংগ্রেসের সব নেতা-কর্মীরই প্রার্থনা, দলের যা পরিস্থিতি, তাতে এখনই হাল ধরুন সনিয়া।
|