আজ সপ্তমী। পুজো অবশ্য এ বার শুরু হয়েছে দু’দিন আগে থেকেই। শনি থেকে এক রকম টানা ছুটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। নমঃ নমঃ করে শুক্রবারটা কাটাতে পারলে আবার উইকএন্ড। এবং সোমের পর মঙ্গলবার ফের লক্ষ্মী ঘরে আনার ছুটি। পুজোকে ঘিরে এমন ছুটির সুযোগ কিন্তু প্রতি বার আসে না। অর্থাৎ এই ক’দিন চলবে চুটিয়ে আড্ডা, ঠাকুর দেখা, ভূরিভোজ, কোলাকুলি এবং আরও কত কী। তবে এই আনন্দমুখর লম্বা ছুটি থেকে যদি ‘ঘর গোছানোর’ জন্য অন্তত কিছুটা সময় বার করতে পারেন, তা হলে ভবিষ্যতের জন্য তা অত্যন্ত কাজের হতে পারে। এই কলমে ঘর গোছানোর অর্থ লগ্নি সংক্রান্ত সব কিছু ঠিকঠাক করা, যা সময়ের অভাবে এত দিন করা হয়ে ওঠেনি। এই ক’টি দিনের মধ্যে আপনি কী কী করতে পারেন, তার একটি তালিকা তৈরি করা যাক।
১) যাঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লগ্নি করেছেন, তাঁরা শ্রেণিবদ্ধ ভাবে সব লগ্নির একটি তালিকা তৈরি করতে পারেন। করতে পারেন তাদের বর্তমান মূল্যায়ন। এই চিত্রটি তৈরি হলে সিদ্ধান্ত নিতে বেশ সুবিধা হবে। যে সব লগ্নি খুব একটা বেড়ে ওঠেনি, তা বিক্রি করে অন্যান্য সফল এবং সুরক্ষিত প্রকল্পে লগ্নি করার কথা ভাবতে পারেন। এই তালিকাটি তৈরি হলে ছোটখাটো লগ্নিও চোখের অন্তরালে চলে যেতে পারবে না। দেখবেন, এমন অনেক ছোট ছোট লগ্নি আছে যা আপনি ভুলে বসে আছেন। এই ধরনের একটি তালিকা থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবর্তমানে তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা জানতে পারবেন, কী আর্থিক সম্পদ যথাক্রমে তাঁদের স্বামী এবং বাবা রেখে গিয়েছেন। এই ধরনের পূর্ণ তথ্য না থাকার কারণেই ব্যাঙ্কে এবং বহু কোম্পানিতে হাজার হাজার কোটি টাকার দাবিহীন আমানত এবং ডিভিডেন্ড পড়ে আছে। যাঁদের জন্য এই সম্পদ রেখে যাওয়া, সেগুলি তাঁদের কোনও কাজেই এল না শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে। এই সব তথ্য ভাল শক্ত ডায়েরিতে লিখে রাখা যেতে পারে। কম্পিউটারে নথিবদ্ধ করে সিডি-ও করে রাখা যেতে পারে। দেখতে হবে, সমস্ত কিছু যেন গুছিয়ে লেখা থাকে। এবং তালিকাটির কথা সবথেকে কাছের লোককে জানিয়ে রাখতে হবে। এই অনিশ্চিত দুনিয়ায় সংসারের স্বার্থেই এই ধরনের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
২) কোম্পানি ডিভিডেন্ডের মরসুম এখন প্রায় শেষের দিকে। দেখে নিন আপনার সব ডিভিডেন্ড ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে কি না।
৩) দেখে নিন আপনার সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নমিনেশন করা আছে কি না। না থাকলে ব্যাঙ্ক খুললে তা করার কথা ভাবতে পারেন। একই কথা প্রযোজ্য ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেও।
৪) ব্যাঙ্কে যাঁদের পুরনো অ্যাকাউন্ট আছে, তাঁদের দেরি না করে দাখিল করতে হবে ‘কে ওয়াই সি’ কাগজপত্র অর্থাৎ আপনার ফটো, প্যান কার্ডের কপি, ভোটার আইডি কার্ডের কপি, ঠিকানার প্রমাণ যেমন বিদ্যুৎ অথবা টেলিফোন বিলের কপি ইত্যাদি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যাঙ্কগুলি পুরনো গ্রাহকদের এই সব কাগজপত্র দাখিল করার জন্য চিঠি দিচ্ছে। সেই সঙ্গে বলা হচ্ছে, নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে তা জমা না করলে অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া অথবা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। ছুটির মধ্যে কাগজগুলি গুছিয়ে রাখা যেতে পারে।
৫) পরীক্ষা করে দেখে নিন, আপনার কোনও মেয়াদি আমানতের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে কি না। হয়ে থাকলে ব্যাঙ্ক খুললে তা ভাঙানো অথবা নবীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬) বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে যাঁদের উইল করার প্রয়োজনীয়তা আছে, তাঁরা এই ছুটির মধ্যে উইলের একটি খসড়া তৈরির কথা ভাবতে পারেন।
৭) দেখে নিন, আপনার জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম ঠিক সময়মতো দেওয়া হয়েছে কি না। না হয়ে থাকলে অবশ্যই চেক কেটে রাখুন।
৮) পেনশন প্রাপকরা এই ছুটির মধ্যেই লাইফ সার্টিফিকেট দাখিল করার প্রস্তুতি নিয়ে নিন।
৯) শেয়ার বাজার এখন বেশ নীচের দিকে। যাঁদের কাছে লগ্নিযোগ্য তহবিল আছে, তাঁরা এই সময়ে বিনিয়োগ পরিকল্পনা ছকতে পারেন। অনেক মিউচুয়াল ইউনিট এবং ভাল শেয়ার এখন পাওয়া যাচ্ছে বেশ সস্তায়।
১০) সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যদি মোটা টাকা অলস ভাবে পড়ে থাকে, তবে তা মেয়াদি আমানতে রাখার কথা ভাবতে পারেন। ব্যাঙ্ক-সুদ এখন বেশ আকর্ষণীয়।
অর্থাৎ অনেক কিছুই করা যেতে পারে এই আনন্দ-উৎসবের ফাঁকে ফাঁকে। এতে আনন্দ থাকবে ভবিষ্যতেও। |