এক পরিবার। কিন্তু, পুজো দু’টি। দু’টিই শতাব্দী প্রাচীন। বড় তরফের পুজো অনেক বেশি ঐতিহ্য মণ্ডিত। তবে ছোট তরফের পুজোর আকর্ষণও কম নয়। দু’তরফই সাড়ম্বরে পুজোর আয়োজন করেন। কিন্তু, দু’টি তরফের সদস্যদের মধ্যে পুজো নিয়ে এতটুকু রেষারেষি নেই। বোলপুরের সুরুল গ্রামের সরকার পরিবারের পুজো এ ভাবেই এলাকাবাসীর আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়ে গিয়েছে।
জমিদার শ্রীনিবাস সরকার প্রথম পুজোর সূচনা করেছিলেন। তা প্রায় ২৭৭ বছর আগের ঘটনা। পরে তাঁর উত্তরসূরী প্রভু সরকার আলাদাভাবে পুজোর সূচনা করেন। যা ছোট তরফের পুজো নামে পরিচিত। সেই পুজোও প্রায় ১০০ বছর অতিক্রান্ত করেছে। গ্রামে আরও কয়েকটি পুজো হয়। তবে, প্রাধান্য পায় বড় তরফের পুজো। বড় তরফের পুজোর সঙ্গে এখন ১৮০টি পরিবার যুক্ত। সপ্তমীর সকালে দোলা নিয়ে প্রচুর মানুষ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা-সহকারে বড় তরফের ঘট ভরতে যান। আগমনী গান, ঢাক-সহ অন্যান্য বাদ্য সহকারে নাচে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম। পুজো প্রাঙ্গণ তথা জমিদার বাড়িতে চর্তুদোলা ঢোকার পরে পরিবারের সব চেয়ে বয়স্ক সদস্য দোতলা থেকে ক্ষীরের নাড়ু ছোড়েন নীচে। তা নেওয়ার জন্য বহু মানুষ বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের মধ্যে উৎসাহ দেখা যায়। তেমনি উৎসাহ দেখা যায় দশমীর সকালে অপরাজিতা লতার তাগা বাঁধতে। প্রচুর মানুষ জড়ো হন। পরে ছোট তরফ ও গ্রামের অন্য পুজোর লোকজন ঘট ভরতে যান।
বড় তরফের পুজোর জাঁকজমক প্রথম থেকেই নজরকাড়া। মৃৎশিল্পী প্রতিমা তৈরি করে দিয়ে চলে যাওয়ার পরে পঞ্চমী ও ষষ্ঠীর দিন পরিবারের সদস্যেরা দেবীকে সাজান। তাঁরাই ডাক সাজে দেবীকে সাজান। বরাবর এই রীতি মানা হচ্ছে। সপ্তমী থেকে তিন দিন দেবীকে ১১০টি থালায় ভোগ দেওয়ার চল রয়েছে। নাড়ু, সন্দেশ ইত্যাদি মিষ্টি দেওয়া হয়। বাজার থেকে কেনা হয় না। পরিবারের সদস্যেরা এখনও সে সব তৈরি করেন। ছোট তরফও সাবেক রীতি মেনেই পুজো করেন। পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, দশমীর সকালে পুজো প্রাঙ্গণে শঙ্খ চিল আসে। তা দেখতে বড় তরফেরও অনেকে সেখানে ভিড় জমান। ভিড় জমান গ্রামের অনেক বাসিন্দা।
বড় তরফের পুজোর এক সেবাইত তথা সদস্য শিবপ্রসাদ সরকার জানিয়েছেন, প্রতিমার মূর্তি প্রথম দিন থেকে একই ধাঁচের হয়ে আসছে। প্রতিমা শিল্পীরা বংশ পরাম্পরায় এখানে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন। এখনও সন্ধ্যায় জ্বালানো হয় রেড়ির তেলের ঝাড়বাতি। ছোট তরফের সদস্যা কল্পনা সরকার বলেন, “আমাদের দুটি তরফের পুজো দেখতে গ্রামের তো বটেই, আশপাশের গ্রাম থেকেও অনেকে আসেন। দু তরফের মধ্যে পুজো নিয়ে কোনও রেষারেষি নেই। আছে সৌহার্দ্য।” দু তরফের অনেক সদস্যই এখন প্রবাসী। কিন্তু, পুজোর সময় তাঁরা বাড়ি ফিরে আসেন। তখন মিলন মেলার রূপ নেয়। তাঁদের সঙ্গে মেতে ওঠেন স্থানীয়রাও। তাঁরা যাত্রাপাল মঞ্চস্থ করেন। পুজো প্রাঙ্গণে মেলা বসে। দর্শনার্থীদের সমাগমে জমজমাট হয়ে ওঠে মণ্ডপ চত্বর। |