এ বার হয়তো আর পাড়ায় পুজো হবে না।
ভেবেই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল মুন্না, বিনোদ, রিঙ্কু, সতীশদের। পুজোর দিনে সবাই যখন নিজের নিজের পুজো নিয়ে ব্যস্ত, তখন তাদের পুজো দেখতে যেতে হবে অন্য পাড়ায়। স্কুল খুললে যখন সবাই গল্প করবে, তখনও চুপচাপ শুনে যেতে হবে।
শেষ পর্যন্ত খুদেদের মুখে হাসি ফোটাতে এগিয়ে এলেন মায়েরাই। তাঁদের উদ্যোগেই এ বার পুজো হচ্ছে দুর্গাপুরের ওয়ারিয়ার ডিটিপিএস নিউ কলোনিতে। দায়িত্বে ৩৫ জনের প্রমীলা বাহিনী।
কলোনিতে কোয়ার্টারের সংখ্যা ১৩০। পরিবারের সংখ্যা প্রায় দু’শো। প্রায় ৪৬ বছর আগে কলোনির বাসিন্দারা পুজো শুরু করেন। দিন দিন ব্যস্ততা বাড়তে থাকায় বাড়ির পুরুষেরা আর এই দায়িত্ব নিতে চাইছিলেন না। গত কয়েক বছর ধরেই টালমাটাল চলছিল।
এ বারের পুজোর উদ্যোক্তা মঞ্জু জানা, গীতা দত্তরা জানান, শেষ পর্যন্ত এ বার আর পুজো হবে কি না তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কলোনির সকলেই বিশেষ করে কচি-কাঁচারা মুখ ভার করে বসেছিল। অবশেষে পাড়ার মহিলারাই কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন পুজো আয়োজনে। |
প্রথমে একটু সংশয় ছিল। এত বড় আয়োজন। সব ঠিক-ঠাক হবে তো!
তবে পুজোর দিন যত ঘনিয়ে এসেছে কাজটা আর তত কঠিন মনে হয়নি। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। পলাশডিহা থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা হয়েছে। ওয়ারিয়ার এক ডেকরেটরকে মণ্ডপ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মণ্ডপে শোলার নানা কারুকাজ লাগানোর কাজ করেছে খুদেরাও। পুজো কমিটির পক্ষে অনুসূয়া ঘোষ বলেন, “বছরভর ব্যস্ততার মাঝে একমাত্র মনোরঞ্জন এই পুজো। তার আয়োজন করতে পেরে খুব ভাল লাগছে।”
শুধু কী পুজো! এ বার আর ষষ্ঠীতে সাদামাটা উদ্বোধন নয়, হল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। এছাড়া মোমবাতি জ্বালানো, ধুনুচি নাচ, আবৃত্তি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে। রয়েছে নবমীর দুপুরে একসঙ্গে বসে পাত পেড়ে খাওয়ার ব্যবস্থাও। কান্তা পটেল, অনিন্দিতা মজুমদার, শীলা জোয়ারদাররা জানান, আয়োজনের মূল দায়িত্বে তাঁরা থাকলেও বাড়ির পুরুষেরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করছেন।
ওয়ারিয়া থেকে খুব দূরে নয় রাতুরিয়া। সেখানেও রাতুরিয়া সর্বজনীন পুজো কমিটির পুজো হয় বছর সাতেক ধরে। গত বছর থেকে পুজোর ভার নিয়েছেন পাড়ার মহিলারা। ইসকন মন্দিরের একাংশের আদলে মণ্ডপ গড়ার কাজ প্রায় শেষ। ডাকের সাজের প্রতিমা। পুজো কমিটির পক্ষে পম্পা মণ্ডল জানান, পাড়ার পুরুষেরাই এই পুজো করতেন। গত বছর মহিলারা এগিয়ে আসেন। পুজো আয়োজনের মজা টের পেয়ে এ বারও তাঁরাই মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন। পম্পাদেবী বলেন, “পুজো আগেও হত। কিন্তু মহিলারাও এগিয়ে আসায় পুজোর মেজাজটাই বদলে গিয়েছে।” |