পিঙ্কির জন্য একটু ভাবুন, আবেদন করছে সহপাঠীরা |
পিঙ্কির জন্য একটু ভাবুন।
শিল্পাঞ্চলের বড় পুজো উদ্যোক্তা, সাধারন মানুষ ও বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনের কাছে এই আবেদন জানাচ্ছেন আসানসোলের হিরাপুর মানিকচাঁদ ঠাকুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী-শিক্ষিকারা। ক্যানসারে আক্রান্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পিঙ্কি মণ্ডলের অস্ত্রোপচারের জন্য টাকা জোগাড় করতে পথে নেমেছেন তাঁরা। তাঁদের আবেদনে সাড়াও দিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা ও একাধিক সংগঠন। নিজেরা তো টাকা দিচ্ছেনই, আবেদন জানিয়ে মণ্ডপে ফেস্টুন টাঙিয়েও সাহায্য চাইছেন অনেকে।
দরিদ্র পরিবারের মেয়ে পিঙ্কি মণ্ডল। দেড় বছর আগে বাবা মারা গিয়েছেন। সামান্য একটা খড় কাটা যন্ত্রের সামান্য আয়ে সংসার চলত। বাবার মৃত্যুর পরে তা-ও বন্ধ। মা চম্পাদেবী গৃহপালিত গরুর দুধ বিক্রি করে দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চালান। কিন্তু হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। এর উপরে মেয়ের ব্যয়সাপেক্ষ চিকিৎসা। কিন্তু পিঙ্কি দমে যায়নি। নিজে কলকাতা গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে। খরচ জোগাড় করে দিয়েছেন স্কুলের শিক্ষিকা ও সহপাঠীরা। কিন্তু আর তো সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন, কেমো থেরাপিতে আর কাজ হবে না। অস্ত্রোপচার করতে হবে। পিঙ্কির লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে ফের ঝাঁপিয়ে পড়েছেন স্কুলের শিক্ষিকা ও সহপাঠীরা। এই কাজে তাঁদের সাহায্য ও উৎসাহ দিচ্ছেন আসানসোলের মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত। তিনি বলেন, “ওই স্কুলের সব ছাত্রীই আমার সন্তান। আমিও সাধ্য মতো চেষ্টা করব।” |
পুজোর খরচ কমিয়ে প্রায় ষোলো হাজার টাকা ও কিছু জামা-কাপড় পিঙ্কির হাতে তুলে দিয়েছেন শিক্ষিকা ও সহপাঠীরা। প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য বলেন, “পিঙ্কির ইচ্ছাশক্তি অদম্য। সবই ও করছে, আমরা শুধু পাশে আছি। ওকে আমরা সুস্থ করে তুলবই।” এ বার পুজোর বাজেট কাটছাঁট করেছে সহপাঠী অর্পিতা সিংহ, সুরভি চক্রবর্তী, সুদ্দিতী হাজরারা। সুরভি বলে, “এ বার সাজার জিনিস নিইনি।” অপর্ণার কথায়, “অন্য বছরে আমি পুজোর চার দিনই নতুন জামা পরি। এ বার তিনটে। বাকিটা পিঙ্কির জন্য।” সুদ্দিতী বলে, “ওকে দেখে বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাই।” পিঙ্কির কথা শুনে এগিয়ে এসেছে আসানসোলের বড় বাজেটের পুজো উদ্যোক্তারা। রবীন্দ্রনগর উন্নয়ন সমিতি কয়েক হাজার টাকা তুলে দিয়েছে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার হাতে। পুজোর চার দিন আরও কিছু সংগ্রহ করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাধানগর অ্যাথলেটিক ক্লাব ইতিমধ্যে অর্থ সংগ্রহে নেমেছে। আসানসোল কোর্ট রোড পুজো কমিটির সহ-সভাপতি সুব্রত দত্ত জানান, তাঁরাও টাকা দিচ্ছেন। ফেস্টুন লাগিয়ে আবেদনও করছেন। একটি সমাজসেবী সংগঠন পিঙ্কির সঙ্গে দেখা করে কয়েক হাজার টাকা দিয়েছে। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বার্নপুর শাখার অফিসার্স ও স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা পুজোর খরচ বাঁচিয়ে তুলে দিয়েছেন প্রায় ৩৩ হাজার টাকা। এই সবে আপ্লুত পিঙ্কি। তার কথায়, “আমি এই সব টাকা দিয়ে অস্ত্রোপচার করব। বেঁচে থাকব।”
প্রায় দু’বছর আগে পিঙ্কির যখন প্রথম ক্যানসার ধরা পড়ে, চিকিৎসার খরচের কথা ভেবে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা। সব শোনার পরে এগিয়ে আসেন জীববিজ্ঞানের দিদিমনি ভারতী দে। প্রতি মাসে মাইনের একটা অংশ তিনি দেন পিঙ্কির চিকিৎসার জন্য। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসর নিয়েছেন। স্কুলের শেষ দিনে পিঙ্কিকে বুকে টেনে ধরা গলায় তিনি বলেন, “আমি তোর সঙ্গে আছি। অসুবিধা হবে না।” দু’জনের আলিঙ্গনে চোখে জল উপস্থিত সকলের। পিঙ্কিকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে চোয়ালও শক্ত হয়েছে শিক্ষিকা-সহপাঠীদের। |