দৈত্য-কড়ায় খিচুড়ি
রিতরকারি মেশানো এক বিশেষ ধরনের খিচুড়ি। তালপাতায় পরিবেশন করা সেই খিচুড়ির স্বাদও একেবারে স্বতন্ত্র। বিলাস বহুল চার চাকার গাড়ির মালিক থেকে দিন গুজরান করা, সকলেই সেই খিচুড়ির জন্য এক লাইনে। সপ্তমী থেকে নবমীর দুপুর এবং সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ির রামকৃষ্ণ মিশনেই দেখা যায় এই দৃশ্য। পুজোর দিনে আশ্রমের খিচুড়ি প্রসাদ না খেলে তৃপ্তি হয় না এমন ব্যাক্তির সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবে না। আশ্রমের ৫১ বছরের দুর্গা পুজোর ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে মিশে রয়েছে তরিতরকারি মেশানো এক বিশেষ ধরনের খিচুড়ির স্বাদ। প্রতিদিন প্রায় ৬-৭ কুইন্টাল চাল ডালের খিচুড়ি রান্না হয় আশ্রমে, যার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় পুজোর বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
দৈত্যাকার এক একটি কড়াই। যার পেটে আনায়াসে ঢুকে যাবে ১৮ কেজি চাল, ১২ কেজি ডাল এবং ২০ কেজি তরকারি। আশ্রমের খিচুড়ির সঙ্গে আলাদা ভাবে লাবড়া বা অন্য তরকারি হয় না। আলু, ফুলকপি, গাজর, মটরশুটি-সহ অন্যান্য তরকারি মিশিয়েই খিচুড়ি রান্না হয়। আতপ চাল আর মুগের ডালের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় ছোলার ডাল। তারপরে চাপিয়ে দেওয়া হয় উনানে। সব মিলিয়ে এক বিশেষ ধরনের স্বাদ। প্রতিদিন ভোর ৪টে থেকে শুরু হয়ে যাবে রান্না। হবেই বা না কেন, প্রতিদিন অন্তত ২০ কড়াই খিচুড়ি রান্না হবে। প্রতিবারই ১৮ কেজি চাল, ১২ কেজি ডাল আর ২০ কেজি তরকারি দিয়ে খিচুড়ি রান্না হবে। অতীত অভিঞ্জতায় আশ্রম কর্তৃপক্ষ লক্ষ্য করেছেন অষ্টমীর দিন ভিড় হয় সবচেয়ে বেশি। সে কারণে অষ্টমীর প্রস্তুতিও নেওয়া হয় বিশেষ ভাবে। সেদিনের জন্য ২০ কড়াই খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা থাকে।
জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক অক্ষয়ানন্দজি মহারাজ বললেন, “সপ্তমী ও নবমীর দিন গড়পরতা ১৫ কড়াই রান্না হয়, ভিড় বাড়লে ২০ কড়াই ছাড়িয়ে যায়। অষ্টমীর দিন প্রসাদ প্রার্থীর সংখ্যা বেশিই থাকে। সেদিন প্রায় ২৫-৩০ কড়াই খিচুড়ি রান্না হয়। ভিড় বাড়তে থাকলে রান্না চালিয়ে যাওয়া হয়।”
প্রসাদ বিতরণে আশ্রম কর্তৃপক্ষের ক্ষান্তি নেই। খিচুড়ি রান্না ও বিতরণের জন্য পৃথক স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী থাকে। পুজোর কোনও দিন সকালে ভিড় বাড়তে থাকলে সে খবর পৌঁছে যায় আশ্রমের হেঁসেলে। নিমিষে শুরু হয়ে যায় আরেক কিস্তি রান্না। আশ্রমের সন্ন্যাসীরাই মূলত রান্না পরিচালনা করেন। তবে এই বিপুল পরিমাণ খিচুড়ি তৈরি করার জন্য বাইরে থেকে ১৫ জন পেশাদার রাঁধুনি ও জোগানদার আশ্রমে পুজোর কদিন নিয়োগ করা হয়। প্রতিদিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টে এবং সন্ধ্যে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হয়। খিচুড়ি রান্নার জোগাড় শুরু হয়ে যায় ষষ্ঠী থেকে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তরকারি কেটে যাওয়ার কাজ করেন আশ্রমের সন্ন্যাসী থেকে শুরু করে এলাকাবাসীরাও। বিবেকান্দ যুব মহামন্ডল, সারদা সংঘের মতো সংস্থার সদস্যরাও রান্নার জোগাড়ে সাহায্য করেন বলে আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। জলপাইগুড়ি আশ্রমের সম্পাদক স্বামী অক্ষয়ানন্দ বলেন, “দেবীকে মা হিসেব পুজো করা হয়। পুজোর নিয়ম নিষ্ঠা ও পবিত্রতার জন্যই দিন দিন আশ্রমে দর্শনার্থীর ঢল বেড়েই চলছে। পুজোর দিনে কাউকেই প্রসাদ না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.