|
|
|
|
প্রচুর অস্ত্র, সোনা বিস্ফোরক উদ্ধার |
সোনার দোকানে খুনে জড়িতদের ধরল পুলিশ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
শিলিগুড়িতে সোনার দোকানে খুন ও লুঠপাটে চিহ্নিত দুষ্কৃতীদের ‘স্পেশ্যাল টিম’ গড়ে ধরল পুলিশ। ঘটনাচক্রে ওই হামলার দিন শিলিগুড়িতে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুষ্কৃতীদের যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করতে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯ সেপ্টেম্বর। মুখ্যমন্ত্রী সে দিন শিলিগুড়িতে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পরে দ্রুত দুষ্কৃতীদের ধরতে নির্দেশ দেন তিনি। শুক্রবার আলিপুরদুয়ারের কালচিনি থানা এলাকায় ওই ডাকাত-দলের পাণ্ডা আমিনুল মিয়াঁ ওরফে জুল্লত এবং তার সহযোগী অস্ত্র ব্যবসায়ী পঙ্কজ মিশ্র ওরফে পণ্ডিত-সহ ৫ জনকে ধরে ‘স্পেশ্যাল টিম’। উদ্ধার করা হয় প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র। আজ, শনিবার ধৃতদের আলিপুরদুয়ার আদালতে হাজির করানো হবে।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের কাছ থেকে ও জেরায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি চালিয়ে এ দিন রাত পর্যন্ত ২৪ নাইন এমএম পিস্তল, ২টি কার্বাইন, ২টি একে-৪৭, ২৭০ রাউন্ড তাজা গুলি, ১৩টি জিলোটিন স্টিক, দেড় কেজি বোমার মশলা, নগদ প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা, প্রায় এক কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে একটি বিলাসবহুল গাড়ি। পুলিশের সন্দেহ, বিহারের বাসিন্দা পণ্ডিতই মুঙ্গেরের অস্ত্র অসম ও উত্তরবঙ্গে পৌঁছে দেয়। সেই অস্ত্র মজুত করে বড় মাপের ডাকাত-দল গড়তে জুল্লত ছক কষেছিল বলে পুলিশের অনুমান।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “ভূমিকম্প-পরিস্থিতি দেখতে এসে মুখ্যমন্ত্রী যখন শিলিগুড়িতে, সেই সময়ে শহরে খুন ও ডাকাতি করে দলটি। শিলিগুড়ি থানা সঙ্গে সঙ্গেই ডাকাত দলের পাণ্ডাকে চিহ্নিত করে ফেলে। গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পুজোর আগে যে ভাবেই হোক ডাকাত দলটি ধরার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। টিম হিসেবে কাজ করে পুলিশ ভাল সাফল্য পেয়েছে।” |
|
শিলিগুড়ির ওই সোনার দোকান থেকে পাওয়া সিসিটিভি
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে রিভলভার হাতে মহম্মদ জুল্লুত। |
দুষ্কৃতী দলটি ধরা পড়ায় স্বস্তির নিশ্বাস পড়েছে পুলিশের। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত আইজি ড্যানিয়েল শেরিং লেপচা বলেছেন, “তিন জেলার (দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার) পুলিশ একযোগে কাজ করে সাফল্য পেয়েছে। ওই দলে যুক্ত বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে। তল্লাশি চলছে। পাশাপাশি, এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের কারবারে আর কারা যুক্ত সেটাও দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে ডাকাত দলের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগ থাকার কোনও সূত্র পুলিশ পায়নি। তবে সবই তদন্ত হবে।” দার্জিলিঙের স্পেশ্যাল আইজি এন রমেশবাবুর দাবি, “স্পেশ্যাল টিম দিনরাত কাজ করায় এই সাফল্য এসেছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, খবর জেনে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় ‘স্পেশ্যাল টিম’-এর পুলিশকর্মীদের আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
২৮ বছর বয়সী জুল্লতের বাড়ি জয়গাঁ থানা থেকে বড় জোর ৩০০ মিটার দূরে ঝর্নাবস্তিতে। ইদানীং সে হ্যামিল্টনগঞ্জে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকছিল। পুলিশের সন্দেহ, বছর তিনেক আগে থেকে সে ডাকাতিতে হাত পাকায়। তার পরে ধীরে ধীরে অসম ও বিহারের দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, অস্ত্র এনে বড় মাপের দল বানিয়ে পর পর কয়েকটি সোনার দোকানে ডাকাতি করে। যে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে পারদর্শী জুল্লত সামান্য বাধা পেলে সটান গুলি চালিয়ে খুন করত বলে পুলিশের দাবি। অন্তত ৩টি খুনের মামলা রয়েছে জুল্লতের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশ এত দিন তাকে ধরতে পারেনি।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, মাস ছ’য়েকের মধ্যে কোচবিহার, জলপাইগুড়ির নানা এলাকায় সোনার দোকানে লুটপাট চালায় জুল্লত ও তার দলবল। মাস দু’য়েক আগে জলপাইগুড়ির একটি ডাকাতির মামলার তদন্তে নেমে কোচবিহার থেকে তার দলের কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। |
|
মূল অভিযুক্ত মহম্মদ জুল্লুত। |
গত ১৯ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ির এনটিএস মোড়ে একটি সোনার দোকানে নিরাপত্তা রক্ষীকে খুন করে ডাকাতি করে দুষ্কৃতীরা। পালানোর সময়ে তাদের এলোপাথাড়ি গুলিতে দু’জন পথচারীও জখম হন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ হয়, এটা জুল্লতের দলের কাজ। শিলিগুড়ি থানার আইসি পিনাকী মজুমদার জুল্লতের ছবি দেখালে দোকান মালিক ও কর্মীরা শনাক্ত করেন।
পুলিশের দাবি, দোকানে বসানো ‘সিসি টিভি’র ‘ভিডিও ফুটেজ’-এও দেখা গিয়েছে, জুল্লত নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। তার পরেই ‘স্পেশ্যাল টিম’ গড়ে শুরু হয় নজরদারি। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি ছিলেন ‘টিম’ পরিচালনার দায়িত্বে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ‘টিম’-এর কাছে খবর আসে, অস্ত্রের কারবারি পণ্ডিতকে নিয়ে জুল্লত অসম থেকে উত্তরবঙ্গে ঢুকবে। কালচিনির কোনও জঙ্গল এলাকায় অস্ত্র লেনদেন হবে। পুলিশ জুল্লতের গাড়িকে তাড়া করে। নিমতির জঙ্গল এলাকার কাছে জুল্লতের গাড়িটি উল্টে যায়। তখনই ‘স্পেশ্যাল টিম’-এর অফিসারেরা তাকে গ্রেফতার করেন।
|
নিজস্ব চিত্র
|
|
|
|
|
|