খটখটে রোদ। আকাশে মেঘ নেই। কিন্তু বৃহস্পতিবার চতুর্থীর দুপুরে দেখা গেল কুমোরটুলি থেকে মণ্ডপে প্রতিমা যাচ্ছে পলিথিনের চাদরে মুড়ে। কেন? এ বার জুন মাস থেকে বৃষ্টি যে ভাবে ভুগিয়েছে, তাতে আকাশের উপরে আর ভরসা নেই কারও।
বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারেও বাতাসে আর্দ্রতা ছিল খুব বেশি। রাস্তায় বেরিয়ে কুল কুল করে ঘেমেছেন মানুষ। আর প্রতি মুহূর্তে মনে হয়েছে, অস্বস্তিকর আবহাওয়া থেকে মুক্তি দিতে এই বুঝি ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল। কিন্তু বৃষ্টি আর নামেনি। মঙ্গল-বুধ-বৃহস্পতি বৃষ্টি হয়নি টানা তিন দিন। তাই প্রতি মুহূর্তেই বৃষ্টির আশঙ্কায় ভুগছেন মানুষ।
তবে আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে পুজোর আবহাওয়া নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। উপগ্রহ-চিত্রে বঙ্গোপসাগর বা তার আশেপাশে বায়ুপ্রবাহের মধ্যে এমন কোনও অস্বাভাবিকতা নেই, যা ঘূর্ণাবর্ত কিংবা নিম্নচাপের ইঙ্গিতবাহী। পুজোর আবহাওয়া তা হলে কেমন থাকবে? আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, মোটের উপরে দিনের তাপমাত্রা বেশি থাকবে। আর্দ্রতা থাকবে বেশি। অস্বস্তিকর আবহাওয়ার মধ্যেই কাটাতে হবে পুজো। তা ছাড়া উত্তর এবং মধ্য ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে ইতিমধ্যেই মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গেও মৌসুমি অক্ষরেখা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই পুজোয় এ বার দুর্যোগের তেমন কোনও আশঙ্কা দেখছেন না আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তাঁর পূর্বাভাস, কোনও কোনও দিন স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে দু-এক পশলা বৃষ্টি হতে পারে। তাতে পুজোর আনন্দে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই আবহবিদদের ধারণা। |
কিন্তু এ বার জুন মাস থেকে দক্ষিণবঙ্গে যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে মানুষের মন থেকে বৃষ্টি-ভয় কিছুতেই যাচ্ছে না। এ বার জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাভাবিকের থেকে ২২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি পেয়েছে দক্ষিণবঙ্গ। একের পর এক নিম্নচাপে গত ১২০ দিনের মধ্যে ৯৫ দিনই আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। দু’দুবার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে। পুজোর প্রস্তুতিও মাঠে মারা যেতে বসেছিল। গত চার দিন আকাশ পরিষ্কার থাকায় শেষ পর্যন্ত বেঁচে গিয়েছে পুজো কমিটিগুলি।
তবে সেপ্টেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহই হোক বা অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ গত ১০ বছরের রেকর্ড বলছে, পুজোর চার দিন পুরো খটখটে ছিল এমন একটা বছরও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কখনও নিম্নচাপ, কখনও বা স্থানীয় ভাবে সৃষ্টি হওয়া বজ্রগর্ভ মেঘ ‘ভিলেন’ হয়েছে। আবহবিদেরা তথ্য ঘেঁটে বলছেন, বেশির ভাগ সময়েই বৃষ্টি হয়েছে সন্ধের পরে। রাস্তায় জল জমে গিয়েছে। গত বছর বৃষ্টির অভাবে রাজ্যের ১০ জেলায় খরা ঘোষণা করতে হয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টি হয়েছিল স্বাভাবিকের থেকে ২৬ শতাংশ কম। তবুও পুজোয় বৃষ্টি হয়েছে। আর এ বার তো বৃষ্টিরই বছর।
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে এবং উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ দক্ষিণবঙ্গের থেকে বেশি। গত বছর দক্ষিণবঙ্গ যখন অনাবৃষ্টিতে কাহিল, তখনও উত্তরবঙ্গ (মালদহ ও দুই দিনাজপুর ছাড়া) স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি পেয়েছে। আবার এ বছর দক্ষিণবঙ্গে যখন স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। বৃষ্টিপ্রবণ দুই জেলা কোচবিহার এবং জলপাইগুড়িতে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের থেকে কম।
গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা অক্টোবরের শেষ অবধি স্থায়ী হচ্ছে। তাই অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে পুজো থাকলেও আবহবিদেরা পুজোর আবহাওয়া নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি। কিন্তু এ বার আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, সারা দেশেই বর্ষা বিদায় নিচ্ছে দ্রুত। উত্তর ভারত থেকে তা বিদায় নিয়েছে ইতিমধ্যেই। মধ্য ভারতের বেশ কিছু এলাকা থেকেও পাততাড়ি গুটিয়ে নিয়েছে বর্ষা। গত কয়েক বছরের কথা আলাদা। এমনিতে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাধারণত ৮ অক্টোবর নাগাদ বর্ষা বিদায় নেয়। এ বার তারও আগে সে বিদায় নিতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে। |