সরকার ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়েছে। অথচ কিন্তু রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ব্যাঙ্কে গিয়ে তাঁরা বেতনের টাকা পাচ্ছেন না।
এবং এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, শুক্রবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে রীতিমতো তথ্য-প্রমাণ হাজির করে জানাতে হয়, এ ব্যাপারে সরকারের তরফে কোনও ত্রুটি নেই। গাফিলতিটা ব্যাঙ্কের বলেই তাঁর দাবি। যে কারণে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে কালো তালিকাভুক্ত (ব্ল্যাকলিস্টেড) করার হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।
রাজ্যের কোষাগারে যে প্রবল টানাটানি, তা কারও অজানা নয়। এমনকী, অর্থসঙ্কটের জেরে সরকার কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতাও দিতে পারেনি। এ হেন পরিস্থিতিতে মাস-মাইনের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা ‘না-পড়ার’ খবরে কর্মীমহলে প্রবল উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। পরে তিনি জানান, “সরকারের টাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে প্রতিটি ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট শাখায় সময়মতো পৌঁছে গিয়েছিল। ৯৯% কর্মী বেতন পেয়ে গিয়েছেন। দু’-এক জনের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে।” কী সমস্যা?
কর্মীদের একাংশের অভিযোগ: সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের তরফে বলা হয়েছে, টাকা জমা পড়েনি। ‘শ্যাডো ক্লিয়ারিং’ হয়েছে!
এতেই আপত্তি অমিতবাবুর। তাঁর দাবি, ব্যাঙ্কিং লেনদেনে ‘শ্যাডো’ বলে কোনও শব্দ ব্যবহার হয় না।
অন্য দিকে রাজ্য সরকারি কর্মীদের এক সংগঠনের নেতা সমীররঞ্জন মজুমদার বলেন, “আমাদের মাইনের চেক দেওয়া হয়েছিল গত সোমবার। জমা দেওয়ার পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে পাসবই আপডেট করিয়ে দেখা যায়, টাকা জমা পড়েছে। কিন্তু টাকা তুলতে গেলে কাউন্টার থেকে বলা হয়, ওটা নাকি শ্যাডো ক্লিয়ারিং!
টাকা নাকি আসলে জমা পড়েনি!” জেলায় জেলায় কিছু কর্মী এ দিনও বেতন পাননি বলে সমীরবাবুর অভিযোগ। অর্থমন্ত্রী অবশ্য জানান, সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটির কর্তৃপক্ষ প্রতিটি শাখাকে নির্দেশ দিয়েছেন, শনিবারের মধ্যে রাজ্য সরকারি সব কর্মী যেন বেতনের টাকা
পেয়ে যান।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কিছু দিনের মধ্যে মমতা ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্য সরকারের সব কর্মী পয়লা তারিখে ব্যাঙ্ক মারফত বেতন পাবেন। সেইমতো কর্মীদের ‘স্যালারি অক্যাউন্ট’ খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রায় ১০ লক্ষ সরকারি কর্মীকে ইসিএসের মাধ্যমে যথাসময়ে বেতন দেওয়ার ব্যাপারে অর্থ দফতরও উদ্যোগী হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকার ‘অনাবশ্যক তাড়াহুড়ো’ করেছে বলে কর্মীদের একাংশের অভিযোগ। সিপিএম-প্রভাবিত কোঅর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম, আরও একটু গুছিয়ে নিয়ে অক্টোবর থেকে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বেতন দিন। তবু এ মাস থেকেই হল। ফলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।”
সরকারের বক্তব্য কী? ব্যাঙ্কই বা কী বলছে?
অর্থমন্ত্রী এ দিন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারের কোথাও কোনও ভুল হয়নি, টাকা ঠিক সময়েই ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে। উল্টে তাঁর অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। অন্য দিকে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ কার্যত মেনে নিয়েছেন যে, চেক ক্লিয়ারিংয়ে সময় লাগাতেই কিছু কর্মীর বেতন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, মঙ্গলবার মহালয়ার জন্য ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় ক্লিয়ারিংয়ে দেরি হয়েছে। |