উচ্চতা ৬ ইঞ্চি।
নিরেট সোনার দুর্গা। সিংহবাহিনীর এই দুর্গা কয়েক শতাব্দী ধরে পূজিত হচ্ছে। বরাবাজার রাজবাড়িতে এই দুর্গার পুজো এ বারও হচ্ছে।
সপ্তমীর দিন সিন্দুক থেকে দেবী দুর্গার সোনার প্রতিমা বের করা হয়। স্থাপন করা হয় মন্দিরে। বিজয়ার দিন সকালে শোভাযাত্রা করে ঘট বিসর্জনের পরে সোনার প্রতিমাকে ফের সিন্দুকে ভরে রাখা হয়। |
বরাবাজার রাজবাড়ির সদস্য কল্যাণীপ্রসাদ সিংহদেব ও রামকৃষ্ণ সিংহদেব জানান, বরাভূম এবং মল্লভূম- দুটি অত্যন্ত প্রাচীন রাজ্য ছিল। নাথবরাহ বরাভূম রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নামানুসরণে তাঁর রাজ্যের নাম হয় বরাভূম। সেই থেকেই বরাবাজার। তাঁর বংশের কূলদেবী হিসেবে সোনার তৈরি সিংহবাহিনীর পুজো শুরু হয়। অধুনা ঝাড়খণ্ডের পবনপুরে প্রথম রাজবাড়ি ছিল। প্রায় চারশো বছর আগে বংশধরেরা পবনপুর ছেড়ে বরাবাজারে উঠে আসেন। তাঁরা সঙ্গে করে সিংহবাহিনী দেবীর মূর্তিও নিয়ে এসেছিলেন। সেখানেও পুজো চলছিল। কথিত রয়েছে, রাজা রঘুনাথ সিংহদেব স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী তিনি দেওয়ান রঘুনাথ মিশ্রের হাতে সেই দুর্গামূতি তুলে দেন। তা অধুনা ঝাড়খণ্ডের গোপালপুরে পাঠআন হয় সেখানে ওই মৃর্তির পুজো এখনও হয়। আর ওই মূর্তির অনুরূপ প্রতিমা বারানসি থেকে নিয়ে আসা হয়। সোনা কুঁদে এই প্রতিমা তৈরি করা হয়েছিল। দেবী সিংহবাহিনীর পায়ের নীচে রয়েছে মহিষাসুর। এর শিল্প নৈপুন্য দৃষ্টি নন্দনীয়।
রাজবাড়ির পুজো থাকলেও সেই রাজত্ব এখন আর নেই। পুজোর খরচ বহণ করা এক সময় রাজ পরিবারের সদস্যদের কাছে কঠিন হয়ে উঠেছিল। তখন, এসেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা গড়ে তুলেছিলেন বরাবাজার রাজবাড়ি দুর্গোৎসব কমিটি। সেই কমিটিই এখন পুজো পরিচালনা করে। রাজ পরিবারের সদস্যেরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা পুজোর খরচ বহণ করেন। সবাই মিলে এই পুজোয় মেতে ওঠেন। পুজো কমিটির এক সদস্যের কথায়, বরাবাজার রাজবাড়ির পুজো আমাদের ঐতিহ্য। তাই, এই পুজো আমরা কোনও দিনই বন্ধ হতে দেব না। পুজোর দিনগুলি মণ্ডপে প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করেন। সন্ধ্যায় এখানে নানা রকমের অনুষ্ঠান হয়। আলোর রোশনাই, ধূপের গন্ধ আর সবার উল্লাসে মেতে ওঠে রাজবাড়ির পুজো মণ্ডপ। |