এত দিন কালীপুজোর জন্য খাতড়ার নামডাক ছিল। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে দুর্গাপুজো। সাবেকি পারিবারিক ও ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ির পুজোর পাশাপাশি সর্বজনীন পুজো বেড়ে যাওয়ায় এই শহরের দুর্গাপুজোও এখন জমজমাট হয়ে উঠেছে। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের এই মহকুমা শহরেও পুজোয় জৌলুস এসেছে।
এই তল্লাটের সব চেয়ে প্রাচীন পুজো হল ধবলদেব রাজবাড়ির পুজো। আর্থিক দুরাবস্থার জন্য এখন আর রাজবাড়ির পুজোয় আগের মত জৌলুস নেই। তা সত্বেও তিনশো বছরের বেশি প্রাচীন এই পুজো অতীত গরিমার প্রতীক এলাকার বাসিন্দাদের কাছে। খাতড়া বাজার ষোলো আনার পুজোও শতাব্দী প্রাচীন। নবমীর দিনে এখানে কুমারী পুজো হয়। শহরের বনেদি হালদার পরিবারে শিব-দুর্গার পুজো হয়। যথেষ্ট জাঁকজমক সহকারে এখানে পুজো হয়। শহরের দক্ষিণ পল্লী সর্বজনীন, বিদ্যাসাগর পল্লী সর্বজনীন, কংসাবতী সর্বজনীন, রাজাপাড়া সর্বজনীন, রঙ্কিনীতলা, রবীন্দ্র সরণি, সুভাষপল্লী-সহ বেশ কয়েকটি সর্বজনীন পুজোয় সুন্দর মণ্ডপ, দর্শণীয় প্রতিমা ও মানানসই আলোকসজ্জা দেখতে পাওয়া যায়। আধুনীকতার ছোঁয়া লেগেছে এখানকার পুজো মণ্ডপগুলিতে। |
যেমন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে বিদ্যাসাগর পল্লী। পুজো কমিটির সম্পাদক সমীর পাল জানান, প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার মণ্ডপের ভিতরে ও বাইরে শোলার কারুকার্য থাকছে। স্থায়ী মণ্ডপে পোদ্দারপাড়ার ডাকসাজের প্রতিমা মূর্তি যথেষ্ট দর্শণীয়। রঙ্কিনীতলা সর্বজনীনের পুজো এ বার পাঁচ বছরে পড়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক উজ্জ্বল দে বলেন, “পুরনো মন্দিরের ধাঁচে প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতার মণ্ডপটি অতীত গরিমার নিদর্শন।”
কংসাবতী কলোনির বাসিন্দাদের নিজস্ব পুজো হল কংসাবতী সর্বজনীন দুর্গোৎসব। এ বার এই পুজোর ৫২তম বর্ষ। পুজো কমিটির সম্পাদক অনিল পাল জানান, বাঁশ, থার্মোকল, কাপড় দিয়ে মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে।
শহরের দক্ষিণ পল্লী মণ্ডপও মন্দির। এবার ২২ বছর পূর্ণ করতে চলেছে। এখানে মণ্ডপের সঙ্গে আলোর ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্র সরণি সর্বজনীনের পুজোও দর্শণীয়। পাম্পমোড়ের সুভাষপল্লী সর্বজনীনের পুজো এ বার ২৭ বছরে পড়ল। এখানে স্থায়ী মণ্ডপে পুজো হয়। মন্দিরের সামনে আলোর মালার দরজা থাকছে। রাজাপাড়া সর্বজনীনের পুজো হয় স্থায়ী মণ্ডপে। এ বার ২০ বছরে পড়ল। পুজোয় এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে বাড়তি আকর্ষণ। খাতড়া শহরের অধিকাংশ মণ্ডপ তৈরি হয়েছে মন্দিরের আদলে। শহর পরিক্রমা করলে মনে হতে পারে যেন এক মন্দির নগরী। দুর্গাপুজোয় এক সময় খাতড়া শহরে এত আলো, এত মণ্ডপ, এত জৌলুস ছিল না। এখন তাই, সর্বজনীন পুজোর সংখ্যা বাড়ায় দুর্গাপুজোতেও খাতড়া শহরে প্রান এসেছে। শহরের প্রবীন বাসিন্দা দুর্গাচরণ বরাট, গুরুদাস কর বলেন, “কালীপুজোর রমরমার কাছে দুর্গাপুজো অনেক ম্রিয়মান ছিল। এখন দুর্গাপুজোতেও চাকচিক্য এসেছে।” সাবেকিয়ানা, ঐতিহ্য আর আধুনীকতার মেলবন্ধনে দুর্গাপুজো যেন এখানে মিলনোৎসব হয়ে উঠেছে। |