মোটা টাকা চাঁদা চেয়ে জুলুমবাজি নেই। বাড়ি পিছু দৈনিক ২ টাকা চাঁদা। মাসের পর মাস এ ভাবেই চাঁদা তুলে পাড়ার মহিলারা এ বার দুর্গাপুজো করতে চলেছেন। বাঁকুড়া শহরের উপকণ্ঠের বিজয় যোগাশ্রম পল্লিতে এ বার তাই খুশির আমেজ।
এত দিন এই তল্লাটে দুর্গাপুজো হত না। পাশের বাঁকুড়া শহর যখন পুজোয় মেতে উঠত, তখন এই এলাকা চুপচাপ থাকত। মধ্যবিত্ত এলাকা। পুজো করার সাধ থাকলেও সাধ্য ছিল না। সেই বাধা টপকে এলাকার মহিলারা এ বার দুর্গাপুজো করতে চলেছেন।
বাসিন্দাদের ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে এসেছিলেন সান্ত্বনা মিত্র, সাগরিকা ঘোষ, সুশীলা লায়েকরা। তাঁরা গর্বের সঙ্গে বলেন, “সবাই এক সঙ্গে চেষ্টা করলে এই বাজারেও দুর্গাপুজোর আয়োজন করা যে সম্ভব, তা আমরা করে দেখালাম। এ বার পুজোয় আমাদের পাড়াতেও আলো জ্বলবে, ধূপের সুগন্ধ ছড়াবে, মাইকে পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র শোনা যাবে।” |
দুর্গাপুজো হত না বলে এলাকার মহিলাদের আক্ষেপ ছিল। বিকেলে পাড়ার গল্পের আসরে তা নিয়ে আলোচনাও হত। গত বছর কালীপুজোর পরে তাঁরা ঠিক করেছিলেন, দুর্গাপুজো করতে হবে। কিন্তু, পাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দাই গরিব। পুজোর অত খরচ জোগাড় হবে কী করে- এই চিন্তা তাঁদের কাছে প্রধান বাধা হয়ে ওঠে। পুজোর আগে চাঁদার জন্য মোটা টাকা দেওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না। তা হলে উপায়? তাঁরা ঠিক করেন পরিবার পিছু দৈনিক ২ টাকা করে চাঁদা তোলা হবে। তা হলে, পুজোর আগে অনেক টাকা জোগাড় হয়ে যাবে।
শ্রীশ্রীবিজয় যোগাশ্রম দুর্গোৎসব কমিটির সদস্য অঞ্জলি বিশ্বাস, দীপালি সেন, সান্ত্বনা টক্কররা বলেন, “পুজোর আয়োজনের সামনের সারিতে রয়েছি ১৫ জন মহিলা। সংসারের কাজ সামলে বিকেল হলেই সবাই হইহই করে চাঁদা তুলতে বেরিয়ে পড়তাম। এ জন্য কয়েক জনের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুনতে হয়েছে। কিন্তু, আমরা আমল দিইনি। পরিবারের লোকেরা সবাই উৎসাহ দিয়েছেন। পাড়ায় সাকুল্যে ১৬০ ঘর বাসিন্দার বাস। এখন পুজোর আয়োজন করতে নেমে দেখি দিনের পর দিন চাঁদা তুলে প্রায় ৯৫ হাজার জমে গিয়েছে।” পাড়ার বাসিন্দা,
পেশায় রিকশাচালক গোপাল লায়েক, দিলীপ গরাই বলেন, “আমাদের পাড়ায় দুর্গাপুজো হবে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। ওরা যখন প্রথমে টাকা চাইল ভেবেছিলাম, পুজোর খরচ এ ভাবে জোগাড় হবে না। তবু ওদের উৎসাহ দেখে দিনে ২ টাকা করে দিয়েছি। কিন্তু, এখন পুজোর আয়োজন হতে দেখে মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন দেখছি।”
পুজোর শেষ মুহূর্তে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পাড়ার ছোট মাঠে মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে। কাজের তদারকি করছিলেন কয়েক জন মহিলা। তাঁরা বলেন, “এতই ব্যস্ত যে অনেকে পুজোর বাজার করতে যেতে পারিনি। তবে, নতুন শাড়ি যদি কিনতে নাও পারি, আক্ষেপ থাকবে না।” পাড়ার পুরুষরাও তাঁদের সাহায্য করছেন। পুজোর উদ্বোধন করার জন্য ইতিমধ্যেই জেলাশাসক, পুলিশ সুপারকে আমন্ত্রণপত্র দিয়ে এসেছেন। পরিচিত জনদের সঙ্গে দেখা হলেই বলছেন, “আমাদের পুজো দেখতে আসবেন।” |