বরাদ্দ বাড়লেও সহায় প্রকল্পের কাজে আগ্রহ বাড়ছে না। মুর্শিদাবাদের ২৫৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সমীক্ষা করে এমনই প্রমাণ মিলেছে।
দুঃস্থ গ্রামবাসীদের এক বেলা রান্না করা খাবার দেওয়ার জন্যই এই প্রকল্প চালু হয়েছিল ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে। সেই সময় মাথা পিছু বরাদ্দ হয়েছিল সাত টাকা। কিন্তু তিন বছর পরেও বরাদ্দের সেই অঙ্ক আর বাড়েনি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে আগামী অক্টোবর মাস থেকে ওই বরাদ্দ ২০ টাকা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও ওই প্রকল্পের দিকে গ্রাবাসীদের মুখ ফেরানো যাবে, এমন আশা করছেন না প্রকল্প আধিকারিকেরা। কারণ? প্রকল্পের এক কর্তা বলছেন, “এই বাজারে কুড়ি টাকাতেই বা কী রান্না হবে? তা ছাড়া যাঁরা রান্না করে দেবেন, তাঁদের পারিশ্রমিকও অতি সামান্য। ফলে রান্না করার লোক জোগাড় করাও দুষ্কর।”
মুর্শিদাবাদের সহায় প্রকল্পের আধিকারিক অরিন্দম দত্ত বলেন, “বিভিন্ন পঞ্চায়েতেই ওই প্রকল্প যাতে ফলপ্রসূ হয় তার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই জেলায় এখন পযর্ন্ত ৫৪টি পঞ্চায়েত ছাড়া এই প্রকল্প অন্য কোথাও-ই তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।” বরাদ্দ বাড়লেও গ্রামবাসীরা কতটা মুখ ফেরাবেন তা নিয়ে সংশয় তাই থেকেই যাচ্ছে। ওই প্রকল্পের পরিকল্পনা সহায়ক প্রতীপ রায় বলেন, “রাজ্যে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ২৫০টি পরিবার এক বেলার খাবার ঠিক মতো পাননা। ১৫ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৭৩টি পরিবারের দু’বেলার খাবার জোটেনা। মনে রাখবেন, এই সংখ্যাটা মোট জনসংখ্যার ১১.৫৪ শতাংশ। মূলত এই অনাহার মুছতেই সহায় প্রকল্প শুরু হয়েছিল।” কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতেও ছবিটা বিশেষ সন্তোষজনক নয়। রাজ্য গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৩৫১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে এখনও ২৫০১টি পঞ্চায়েত ওই প্রকল্প চালুই করেনি। কেন সাফল্য মিলল না? মুর্শিদাবাদের বাড়ালা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের আবুল হাসান আজাদ বলেন, “প্রকল্পের উদ্দেশ্য ভাল। কিন্তু বাস্তবতার অভাব রয়েছে। গ্রামে দু-চার ঘর এক বেলা অভুক্ত থাকা পরিবার যে নেই তেমন নয়, কিন্তু কোনও স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী ওই দু-চারটি পরিবারের জন্য রাঁধতে রাজি নয়। বরাদ্দের অঙ্কটা বড্ড কম। তা ছাড়া পারিশ্রমিক হিসেবে জন প্রতি বরাদ্দ ৫ টাকা। এ কী ভিক্ষা?” সুতির বিড়ি শ্রমিক প্রভাবিত উমরাপুর পঞ্চায়াতের প্রধান কংগ্রেসের সাফাতুল্লাও একই কথা বলেন, “ওই সামান্য টাকায় কে রাঁধতে চাইবে বলুন? সমীক্ষা না করেই ওই প্রকল্প চালু করে দেওয়ায় তেমন সাফল্য আসেনি।” |