|
|
|
|
|
জাতপাতের বেড়া ডিঙিয়ে
পংক্তিভোজন কিয়ারানায়
আনন্দ মণ্ডল • ময়না |
|
দুর্গা এখানে শুধুই আরাধ্য দেবী নন। জাতপাত, ধর্ম-সম্প্রদায়ের বেড়া ভেঙে ফেলার সাক্ষীও।
পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার কিয়ারানা গ্রামের দুর্গাপুজো তাই আক্ষরিক অর্থেই সর্বজনীন। আজও অষ্টমীর দিন দুর্গামণ্ডপ প্রাঙ্গণে পংক্তি ভোজনে সামিল হন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার ১০-১২টি গ্রামের মানুষ। কিয়ারানার পণ্ডা পরিবার এই পুজোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের যোগদানেই সাথর্ক দশভূজার আরাধনা।
কংসাবতী, কেলেঘাই, চণ্ডীয়ানদ-নদী পরিবেষ্টিত দ্বীপভূমি ময়নার সঙ্গে কয়েক বছর আগেও বাইরের জগতের যোগ ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। ময়নাগড়ের রাজ পরিবারের অধীন এই এলাকার বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা চাষবাস ও মাছ ধরা। ময়নার দক্ষিণাংশে কেলেঘাই ও চণ্ডীয়া তীরবর্তী এলাকায় বাস ছিল তথাকথিত অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের। চার পুরুষ আগে এই এলাকায় এসে বসবাস শুরু করে ওড়িশার পণ্ডা পরিবার। পুজো পাঠের সূত্রে আসা পণ্ডা পরিবারের উত্তরসূরি ছিলেন গয়ারাম পণ্ডা। পেশায় চিকিৎসক গয়ারামের একমাত্র পুত্র সন্তোষ কটক থেকে ডাক্তারি পাশ করে গ্রামে ফিরে চিকিৎসা শুরু করেন। এলাকায় জাত-পাত, উচ্চ-নীচ বর্ণের ভেদাভেদ তাঁকে গভীর ভাবে নাড়া দেয়। এরপরই শুরু হয় অন্য এক লড়াই। ১৯৩০ সালে এলাকার সকল বর্ণ-সম্প্রদায়ের মানুষজনকে নিয়ে সন্তোষবাবু গড়ে তোলেন সন্তান সঙ্ঘ। সেই সন্তান সঙ্ঘের উদ্যোগেই কিয়ারানা গ্রামে শুরু হয় দুর্গাপুজো। রাজপরিবারের বাইরে সেই প্রথম পুজো ময়নায়। ময়না রাজপরিবারের সদস্য প্রণব বাহুবলীন্দ্রের মতে, “কিয়ারানার পুজো যথার্থই সর্বজনীন।” সন্তোষবাবুর চার পুত্র ও ছয় কন্যা উত্তরাধিকার সূত্রে এখনও পুজোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ময়না বাজার থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে কিয়ারানা বাজারে স্থায়ী দুর্গামণ্ডপ। দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য মেনে সপ্তমীর দিন সাতটি, অষ্টমীর দিন আটটি, নবমীতে নয়টি ও দশমীতে দশটি তরকারি সহযোগে দেবীর অন্নভোগ হয় এই পুজোয়। নবমীর দিন পাঁঠার বদলে প্রতীকী হিসাবে কুমড়ো বলি হয়। সাবেক রূপের মৃণ্ময়ী দশভূজার প্রতিমা গড়েন স্থানীয় মৃৎশিল্পীরাই। পাঁশকুড়া থেকে আসেন পুরোহিত তিন ভাই অরূপ, তপন ও তরুণ ভট্টাচার্য। গ্রামের স্থায়ী মণ্ডপ প্রাঙ্গণে প্রতি বছর অষ্টমীর দিন পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষজন সামিল হন সেই পংক্তিভোজনে। পণ্ডা পরিবারের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিমানবাবুর কথায়, “পংক্তিভোজ হল এই পুজোর অন্যতম অঙ্গ। কিয়ারানার পুজোমণ্ডপ যেন মিলনক্ষেত্র।” |
|
|
|
|
|