সারা রাত ঘুমোতে পারেননি। চোখ বন্ধ করলেই যেন ভেসে উঠছে লাল-হলুদ জনতার অসহায় মুখগুলো!
ফেড কাপ ফাইনাল শেষ হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও ঘোর কাটছে না সন্দীপ নন্দীর। হারের ধাক্কায় মানসিক ভাবে বিধস্ত তিনি। শুক্রবার বললেন, “গতকাল রাতে কিছুতেই ঘুমোতে পারলাম না। সকালে কয়েকটা ফোন এসেছিল। দু’একটা ধরার পর আর ধরিনি। সমর্থকদের জন্য এত কষ্ট হচ্ছিল যে, সারা দিন আর বাড়ি থেকেই বেরোতে পারিনি। শুধু আমার ছোটবেলার কোচ গৌতম সরকারের সঙ্গে দু’এক বার ফোনে কথা বলেছি। আমার যখনই খারাপ সময় যায়, বর্ধমান থেকে উনিই আমাকে মানসিক সাপোর্ট দেন।”
ফেডারেশন কাপে হ্যাটট্রিক করার সুবর্ণ সযোগ ইস্টবেঙ্গল আবার কবে পাবে, কেউ জানে না। বরং তিন-তিনটে গোল খাওয়ার ‘অপরাধে’ ইতিহাসের পাতায় জায়গা হয়ে থাকল ইস্টবেঙ্গল গোলকিপারের। বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় উঠছে সন্দীপকে উদ্দেশ্য করে। তবে এই কঠিন সময়েও লাল-হলুদ কোচ ট্রেভর মর্গ্যান এবং গোলকিপার কোচ অতনু ভট্টাচার্য তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে আশ্বস্ত হচ্ছেন সন্দীপ। বললেন, “কিছুতেই বুঝতে পারছি না, কেন সবাই আমাকেই দোষী বলছেন। হারের জন্য কি আমি একাই দায়ী? মর্গ্যান স্যর আর অতনু স্যর আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন। ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে অনেকক্ষণ কথাও বলেছেন আমার সঙ্গে। এটা ভেবে ভাল লাগছে যে, অন্তত ওঁরা আমাকে ভুল বোঝেননি। আমার লক্ষ্য এখন ক্লাবের ভিয়েতনাম সফর। ওখানে আমাকে আর এক বার সুযোগ দিলে সব কিছু উজাড় করে দেব।” |
সন্দীপ মানতে নারাজ যে, শুধু তাঁর ভুলেই তিনটে গোল হয়েছে। উল্টে প্রত্যেকটা গোলের আলাদা আলাদা ব্যাখা পাওয়া গেল তাঁর কাছে প্রথম গোল: ওপারা, রাজু কেউ জায়গায় ছিল না। একমাত্র খাবরা একটু কভার করার চেষ্টা করেছিল চিডিকে। পারেনি। চিডি ফাঁকা হেড দিয়ে চলে গেল। আমার কিছু করার ছিল না।
দ্বিতীয় গোল: ওই জায়গা থেকে আরও দশ বার মারলে, দশ বারই ধরব। বলটা ক্লিয়ার করার জন্য চাপড় মেরেছিলাম। আমার দুর্ভাগ্য, সেটা ফ্রান্সিসের পায়ে গেল। আমাদের কোনও ডিফেন্ডারের পায়ে গেলে এত কথা উঠত না।
তৃতীয় গোল: বাঁ-দিক দিয়ে ঢুকে আসছিল চিডি। কেউ নেই ওকে ধরার জন্য ছিল না। আমি তা-ও প্রথম শটটা আটকালাম। কিন্তু লাভ হয়নি। ফিরতি বলে সুয়োকা গোল করে চলে গেল। সেই একই ব্যাপার, বলটা সুয়োকার পায়ে না গিয়ে আমাদের ডিফেন্ডারের কাছে গেলে এত প্রশ্ন উঠত না।
সন্দীপ নিজের দোষ স্বীকার করতে না চাইলেও ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের চোখে তিনি-ই প্রধান খলনায়ক। প্রাক্তন লাল-হলুদ গোলকিপার বললেন, “কোনও ভাবেই দায় এড়াতে পারবে না সন্দীপ। তিনটে গোলই হয়েছে ওর ভুলে। শেষ কয়েকটা ম্যাচে ওকে লক্ষ্য করলাম। আউটিং ঠিকঠাক হচ্ছে না। যখন বেরোনোর দরকার, তখন বেরোচ্ছে না। আর যখন বেরোনোর দরকার নেই, তখন গোল ছেড়ে এগিয়ে আসছে। ডিফেন্ডারদের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাবে ভুগছে সন্দীপ। ফুটবলজীবন শেষ হয়ে গিয়েছে বলছি না। তবে টিকে থাকতে হলে, আরও পরিশ্রম করতে হবে। ডিফেন্ডারদের সঙ্গে আরও বেশি করে অনুশীলন করতে হবে।”
মর্গ্যানের প্রথম পছন্দ সন্দীপ। তাই অধিনায়ক হওয়া সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গলের কুড়ি জনের দলে জায়গা হচ্ছে না যাঁর, সেই অভ্র মণ্ডল অবশ্য এ দিন সন্দীপের পাশেই দাঁড়ালেন। বললেন, “সন্দীপদা যে বলগুলো আটকেছিল, সেগুলো ডিফেন্ডাররা বের করতে পারল না কেন?” |