|
|
|
|
পালাবদলে এখন পুজোর নিয়ন্ত্রণও তৃণমূলের হাতে |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
দীর্ঘ দিন ধরে যে সব পুজো-পরিচালনায় ছিল সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদেরই প্রাধান্য, এখন তারও নিয়ন্ত্রণ তৃণমূলের হাতে! পুজোর সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নাম জড়িয়ে যায়ই। অনেকে পুজোকমিটির সামনের সারিতে থাকেন, অনেকে সাধারণ সদস্য হন। গড়বেতা, কেশপুর, শালবনি, গোয়ালতোড়-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা দীর্ঘ দিন ধরেই ছিল সিপিএমের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে। ফলে ওই সব এলাকার অধিকাংশ সর্বজনীন পুজোর কর্মকর্তাও ছিলেন সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। রাজ্যে পালাবদলের পর সেই পরিস্থিতিরও ‘পরিবর্তন’ হয়েছে। পুজো-কমিটির সামনের সারিতে এসেছেন ‘শাসক’ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
এক সময়ে ‘লালদুর্গ’ ছিল কেশপুর। ক’দিন আগে এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের সেখানে অশান্তি ছড়িয়েছে। |
|
কেশপুরে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
এলাকায় চাপা উত্তেজনা থাকলেও কেশপুরে এখন দুর্গা পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোর কদমেই। স্থানীয় বাজার এলাকাতেই সর্বজনীন দুর্গা পুজোর আয়োজন। পুজো দেখতে আশপাশের গ্রাম থেকে বহু মানুষও আসেন। গত বছর পর্যন্ত পুজো কমিটির ‘রাশ’ ছিল সিপিএমের হাতে। এ বার তৃণমূলের। মাস খানেক আগেই নতুন পুজো-কমিটি তৈরি হয়। সম্পাদক হন অপূর্ব ঘোষ। এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবেই পরিচিতি অপূর্ববাবুর। গত বছর পর্যন্ত যাঁরা এ পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের একাংশ এ বার নেই। কেউ ঘরছাড়া। কেউ বা নিজে থেকেই দূরত্ব রেখে চলছেন। সিপিএমের নেতা-কর্মীরা যে এ বার সক্রিয় ভাবে পুজোর সঙ্গে নেই, তা মেনেই পুজো কমিটির সম্পাদক বলেন, “ওঁরা সক্রিয় ভাবে না-থাকলেও পুজোর সঙ্গে আছেন। সে ভাবে হয়তো কাজ করছেন না। কিন্তু তাতে কী! পুজো তো সবারই।” এরই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “আমরা সবাইকে নিয়েই কাজ করতে পছন্দ করি।”
কেশপুর সর্বজনীনের এ বার ৬৫ তম বর্ষ। মণ্ডপ তৈরির কাজ প্রায় শেষের মুখে। প্রতিমায় রং দেওয়া চলছে। পুজো কমিটির এক সদস্যের কথায়, “কেশপুর দীর্ঘ সন্ত্রাস দেখেছে। এতদিন সিপিএমের কিছু কর্মীই হর্তাকর্তা ছিলেন। সব ব্যাপারেই ওঁদের কথাই ছিল শেষ কথা। কিন্তু এখন আর সে পরিস্থিতি নেই। যা হচ্ছে, আলোচনা করেই হচ্ছে।” পুজোর ‘নিয়ন্ত্রক’ যে বদলেছে, তা পুজো কমিটির আরও এক সদস্যের বক্তব্যে স্পষ্ট। তাঁর কথায়, “এ বার পুজোর উদ্বোধন করার জন্য আমরা শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।” শ্রীকান্তবাবু তৃণমূলের বিধায়ক। কেশপুরের নন। তবু? কেননা কেশপুরে এ বারও যে সিপিএম প্রার্থীই বিধানসভা ভোটে জিতেছেন। তাঁকে উদ্বোধক করার কথা ভাবেননি উদ্যোক্তারা।
পরিবর্তিত পরিস্থিতি গড়বেতাতেও। গড়বেতা সর্বজনীনের এ বার ৪০ তম বর্ষ। আগে কোর্ট-মাঠে পুজোর আয়োজন করা হত। এখন অবশ্য থানার পিছনের মাঠে পুজো হয়। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে মন্দিরের আদলে। প্রতিমা সাবেকি। গত বছরেও এই পুজো-কমিটির সামনের সারিতে ছিলেন সিপিএমের গড়বেতা লোকাল কমিটির সম্পাদক দেবু সিংহ-সহ তদানীন্তন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরাই। এ বার অবশ্য তাঁরা আর পুজোর সঙ্গে নেই। পুজো-কমিটির সভাপতি বিজয় ঘোষের কথায়, “রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। এখন আমরা মুক্ত। মানুষ ইচ্ছে মতো চলছেন। এ বার যেন পুজোর আনন্দ অনেক বেশি!” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “পুজোতে আমরা-ওরা বলে কিছু হয় না কি! পুজো তো সবারই।” পুজো-কমিটির এক সদস্য জানালেন, এ বার তাঁরা পুজোর উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদাকে। গড়বেতাতেও বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন সিপিএম প্রার্থী। তা-ও আবার সুশান্ত ঘোষ। তিনি এখন জেলবন্দি। পালাবদলের পরে জেলে না ঢুকলেও যে তাঁকে পুজোর উদ্বোধনে ডাকা হত না, উদ্যোক্তা বদলে যাওয়াটাই তার ইঙ্গিত।
শালবনির আপনজন ও শান্তি কমিটির পুজোর এ বার ২৪ তম বর্ষ। মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে এখানেও। প্রতিমা সাবেকি। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গত বছরও সন্ত্রাসের আবহে পুজো হয়েছে। এ বার পরিস্থিতি পাল্টেছে। তাই পুজো ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনাও যেন বেড়েছে। এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ আতসবাজির প্রদর্শন। কিন্তু গত ক’বছর ধরে এখানে আতসবাজির প্রদর্শন হয়নি। পুজো-কমিটির এক সদস্যের কথায়, “নানা বাধা ছিল। তাই ওই পরিস্থিতি। নমো নমো করে পুজো হয়েছে। তবে এ বার ফের প্রচুর আনন্দ হবে। বাজেটও বেড়েছে।” পুজো-কমিটির সম্পাদক অনুপম গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “যে যে কোনও দল করতে পারেন। সিপিএম কর্মী-সমর্থক বলে যাঁরা পরিচিত তাঁরাও পুজোর সঙ্গে রয়েছেন। তবে সে ভাবে হয়তো সক্রিয় নেই।” পুজো-কমিটির আর এক সদস্যের কথায়, “পুজোয় ভেদাভেদ নেই। কেউ যদি নিজে থেকেই দূরত্ব বাড়ায়, কী-ই বা করতে পারি আমরা!”‘ভেদাভেদ নেই’ বললেও রাজনীতির ছোঁয়াচ বাঁচাতে পারছে না জেলার কোনও পুজোই। কেশপুর, গড়বেতা, নারায়ণগড়, চন্দ্রকোনা থেকে খড়্গপুর, ডেবরা, ঘাটালসর্বত্রই পুজো পরিচালনায় এ বার পরিবর্তনের হাওয়া। পুজোর জৌলুসেও আগের আমলকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা চোখ এড়াচ্ছে না। যার হাত ধরে আবার চাঁদার দাবিও এ বার রীতিমতো বেশি বলে অভিযোগও উঠেছে। |
|
|
|
|
|