পুজোর মুখে শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিল ফের বন্ধ হয়ে গেল।
শুক্রবার সকালের শিফ্টে কাজে যোগ দিতে এসে শ্রমিকেরা দেখেন সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝুলছে। এর জেরে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে অন্তত সাড়ে চার হাজার শ্রমিক নতুন করে বেকার হলেন। মিল বন্ধের প্রতিবাদে এ দিন শ্রীরামপুর বটতলা মোড়ে জিটি রোড অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি বছরে গত সাত মাসে ইন্ডিয়া জুটমিল মোট তিন বার বন্ধ হল। এ বছর মিলটি মার্চ মাসে প্রথম বন্ধ হয়ে যায়। তারপর খোলে জুন মাসে। মাত্র ১৫ দিন চলার পরই ফের মিলটি ১৬ জুলাই আবারও বন্ধ হয়ে যায়। সিটু, আইএনটিটিইউসি-সহ মিলের সাতটি শ্রমিক সংগঠনের সম্মতিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ফের মিলের দরজা খোলে। কর্তৃপক্ষ চুক্তি অনুয়ায়ী বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের বোনাসও দেন। কিন্তু ফের শুক্রবার মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের মাথায় হাত পড়েছে।
মিল কর্তৃপক্ষ সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিসে মিল বন্ধের কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, শ্রমিক অসন্তোষে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল। কর্তৃপক্ষের তরফে মিল চালাতে সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও সাড়া পাওয়া যায়নি। মিলের চিফ এক্সিকিউটিভ রমাশঙ্কর উপাধ্যায় বলেন, “শুধুমাত্র রাজনীতি করে মিল বন্ধ করে দেওয়া হল। বোনাস ও অন্যান্য আর্থিক দাবি-সহ সব কিছু মেনেই শ্রমিক সংগঠনগুলি চুক্তিতে সই করে। কিন্তু পরও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে উৎপাদন কম করা হচ্ছিল। দু’একটি ছাড়া মিলের বেশিরভাগ বিভাগেই উৎপাদন কম করা হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে মিল চালান সম্ভব হল না।”
কর্তৃপক্ষের এই যুক্তি অবশ্য মানতে নারাজ ইন্ডিয়া জুটমিলের সিটু নেতা শিউমঙ্গল সিংহ। তিনি বলেন, “মিল খোলার পর এক সপ্তাহ সময় পাওয়া গেল না। সব শ্রমিক দেশ থেকেই ফেরেননি। তিনটি শিফ্টে মিলে উৎপাদন শুরু হয়নি। কী করে উৎপাদন পূর্ণমাত্রায় হবে? তা ছাড়া, বহু বিভাগে শ্রমিক সংখ্যা কম।” সিটু নেতা আরও বলেন, “আমরা শ্রমমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি মিল দ্রুত খোলার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, কোনও সমস্যা হলে শ্রমিক, কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠন মিলিত ভাবে সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু দেখা গেল গত রাতে হঠাৎ-ই উৎপাদন কমের নোটিস দিয়ে শুক্রবার মিল বন্ধ করে দেওয়া হল।” মিল বন্ধের জন্য তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের তরফে অবশ্য সিটুকেই দায়ী করা হয়েছে। মিলের আইএনটিটিইউসি নেতা অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সিটু কলকাঠি নেড়ে শ্রমিকদের একাংশকে উৎপাদন কম করায় প্রভাবিত করছিল। উদ্দেশ্য, মিল বন্ধ হলে যাতে রাজ্য সরকারকে হেয় করা যায়। তাঁদের চক্রান্তেই শেষ পর্যন্ত পুজোয় কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হলেন।” |