বিতর্ক এ বার ব্রিটিশ আমলের আর একটি আইন নিয়ে। ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইনের মতো এটিও জমি সংক্রান্ত। যাতে বলা আছে, জমি বা সম্পত্তির মালিক যিনিই হোন না, অন্য কেউ তা ১২ বছর দখল করে রাখলে। আসল মালিক নয়, সেই জমি বা সম্পত্তি ওই দখলদারের বলেই গণ্য হবে আইনে। ভারত শাসনের জন্য এই ‘ডকট্রিন অফ অ্যাডভার্স পজেশন’ তৈরি করেছিল ঔপনিবেশিক ইংরেজরা। সাহেবরা গেলেও, উত্তরাধিরকার বলে স্বাধীন ভারতেও এটাই আইন।
পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর থেকে উত্তর প্রদেশের ভাট্টা পারসল, বৃহত্তর নয়ডা সর্বত্র জনস্বার্থের নামে বেসরকারি উদ্যোগের জন্য জোর করে জমি নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার অধিগ্রহণের ওই ব্রিটিশ জমানার আইন প্রয়োগ করেছিল। এর বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে ওঠার ফলেই ওই আইন সংশোধনের জন্য জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সংশোধনী বিল পেশ করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। সেই বিল এখন সংসদের স্থায়ী কমিটির বিবেচনাধীন। আর এই ক্ষেত্রে দখলদারের মালিকানা সংক্রান্ত আইনটি নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন তুলেছে খোদ সুপ্রিম কোর্টই।
ঘটনাচক্রে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ‘উদার’ ক্ষতিপূরণের জন্য উল্লেখ হয়ে থাকে যে রাজ্যটির নাম, সেই হরিয়ানার সরকার ও পুলিশকে আজ তীব্র ভর্ৎসনা, (সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও) করেছে শীর্ষ আদালত। দখলদারের মালিকানা সংক্রান্ত আইনকে অস্ত্র করে এক ব্যক্তির জমি দখল করার চেষ্টা চালানোর জন্য। সেই সঙ্গে রক্ষকেরই ভক্ষক হয়ে ওঠার মতো পরিস্থিত যাতে আর না ঘটে, সে জন্য সংসদ সংশ্লিষ্ট ওই আইন নিয়ে নতুন ভেবে দেখতে পারে বলে আজ মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত। সে কারণে সংশ্লিষ্ট মামলার রায় কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বিচারপতি দলবীর সিংহ ও দীপক বর্মার বেঞ্চ আজ এই রায় দিতে গিয়ে বলেছে, “সম্পত্তির অধিকার শুধু সাংবিধানিক অধিকারই নয়, এটা একটা মানবাধিকার। দখলদারের মালিকানা সংক্রান্ত ওই আইন আমরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। সংসদ এই আইন বিলোপের কথা ভেবে দেখতে পারে। নিদেনপক্ষে বৃহত্তর জনস্বার্থে এই আইন সংশোধন করতে পারে।” |