এটা ঠিক এক যাত্রায় পৃথক ফল নয়। তবে এক যাত্রায় গুনতে হচ্ছে পৃথক দক্ষিণা।
দু’টি ট্রেন একই দূরত্ব যাবে। সেই পথ যেতে দু’টি ট্রেনের সময় লাগবে একই রকম। কিন্তু দু’টির ভাড়া দু’রকম। আজ, শনিবার হাওড়া থেকে ধানবাদ যাওয়ার বাতানুকূল দোতলা ট্রেন চালু হচ্ছে। সেই ‘ডাবল ডেকার’ ট্রেনের যাত্রীদের কিন্তু কোলফিল্ড এক্সপ্রেসের বাতানুকূল কামরার চেয়ে মাথাপিছু ৩০ টাকা বেশি দিতে হবে।
বাতানুকূল ডাবল ডেকার ট্রেন নিয়ে অনেক টালবাহানা হয়েছে। অবশেষে সেটি আজ চালু হতে চলেছে। ওই ট্রেনে হাওড়া থেকে ধানবাদ যেতে সময় লাগবে চার ঘণ্টা ২০ মিনিট। একই রুটে চলা দীর্ঘদিনের ট্রেন কোলফিল্ড এক্সপ্রেসও একই সময়ে ওই দূরত্ব পাড়ি দেয়। তাহলে যাত্রীদের উপরে বাড়তি ৩০ টাকা করে চাপানো হচ্ছে কেন?
রেল-কর্তৃপক্ষ এই ‘বিচিত্র’ কাণ্ডের একটি দায়সারা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, “দোতলা ট্রেনটি সুপারফাস্ট। তার গড় গতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। তাই তাতে চড়তে গেলে যাত্রীদের সারচার্জ দিতেই হবে।” কিন্তু একই সময়ে একই দূরত্ব গেলে কোলফিল্ড এক্সপ্রেসেরও গড় গতিও তো একই হয়। তা হলে ওই ট্রেনে সারচার্জ নেই কেন? এর কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি রেলকর্তারা।
বাড়তি গাঁটের কড়ি খরচ করে দোতলা ট্রেনটির যাত্রীরা কি তা হলে অতিরিক্ত কোনও সুবিধা পাচ্ছেন?
বাড়তি প্রাপ্তি কিছুই নেই। রেলকর্তাদের একাংশ জানান, অতিরিক্ত সুবিধা তো নেই-ই। বরং ট্রেনের ভিতরে বেশ কষ্ট করেই হাঁটাচলা করতে হবে স্বাভাবিক উচ্চতার মানুষদের। কারণ, ট্রেনটির দু’টি তলারই উচ্চতা পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি করে। তাই জুতোর উচ্চতা একটু বেশি হলেই মাঝারি উচ্চতার যাত্রীরা সমস্যায় পড়বেন। আর লম্বা মানুষদের তো চলাফেরা করতে হবে কার্যত ঘাড় হেঁট করে, কলকাতার আগেকার মিনিবাসের যাত্রীদের মতো।
যাত্রীরা বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দোতলা ট্রেন থেকে রেলের বাড়তি আয় হতে পারে। ট্রেনটি জনপ্রিয় হলে রেল-কর্তৃপক্ষ বেশি টাকা তুলে নিতে পারবেন। কী ভাবে সেটা সম্ভব?
রেল সূত্রের খবর, সাধারণ ট্রেনের প্রতিটি কামরায় ৭২ জন যাত্রীর জায়গা হয়। সেই জায়গায় দোতলা ট্রেনটি প্রতিটি কামরায় ১২৮ জন যাত্রী তুলতে পারবে। রেল-কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১০ সালের রেল বাজেটে তিনটি রুটে দোতলা ট্রেন চালানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে হাওড়া-ধানবাদ রুট ছাড়াও ছিল দিল্লি-জয়পুর ও মুম্বই-আমদাবাদ রুট। রেল বোর্ডের মুখপাত্র, চন্দ্রলেখা মুখোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, দিল্লি-জয়পুর ও মুম্বই-আমদাবাদ রুটের জন্য আরও দু’টি ডাবল ডেকার রেক নির্মাণের কাজ চলছে। প্রথম রেকটির নকশায় কিছু ত্রুটি ছিল। তাই নতুন রেক দু’টির প্রস্থ সাড়ে তিন সেন্টিমিটার কমিয়ে ফেলা হয়েছে। |