তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণকে পুজোর পরেই কলকাতা পাঠাতে চান প্রধানমন্ত্রী।
আমেরিকা সফর শেষে দেশে ফেরার পথেই মনমোহন সিংহ জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি ফের তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে চান। এ বার প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি তিনি কৃষ্ণকে কলকাতায় পাঠাবেন। মমতা রাজি থাকলে কৃষ্ণ গিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
কৃষ্ণের পশ্চিমবঙ্গ সফরের অবশ্য অন্য একটি কারণও রয়েছে। তাঁর মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ কালচারাল রিলেশন্স (আইসিসিআর) রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান করবে। কলকাতার আঞ্চলিক কেন্দ্রটির দায়িত্বে রয়েছেন রেবা সোম। রবীন্দ্রনাথের উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শনের পরিকল্পনা করেছে আইসিসিআর। সেই অনুষ্ঠানেই কলকাতায় যাওয়ার কথা কৃষ্ণের।
বিদেশ মন্ত্রক যাতে অতি অবশ্যই মমতাকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান, প্রধানমন্ত্রী সেই পরামর্শ দিয়েছেন। বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাইও বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গী হবেন। তবে অনুষ্ঠানটি কবে, কোথায় হবে, এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। শান্তিনিকেতনেও সেটি করার একটি প্রস্তাব রয়েছে। বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসাবে বৃহস্পতিবারই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সুশান্ত দত্তগুপ্ত। তাঁর সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলবে বিদেশ মন্ত্রক। পরামর্শ নেওয়া হবে মমতারও।
মমতা চাইলে কৃষ্ণ এবং রঞ্জন মাথাই ওই অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কলকাতায় তাঁর সঙ্গে আলোচনাতেও বসবেন। চেষ্টা হবে তিস্তা নিয়ে বরফ গলানোর। এর আগে গঙ্গা চুক্তির সময়ে আজকের বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই ছিলেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব। তিনি নিজেও বেশ কয়েক বার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এমনকী গঙ্গায় কোথায় কত জল রয়েছে, প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নৌকা চড়ে ঘুরে ঘুরে তা দেখেছিলেন। তিস্তা চুক্তির খসড়া না দেখানো যে ভুল হয়েছিল, তা মমতার কাছেও স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ভূমিকম্পের পরে মমতার সঙ্গে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংয়ের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী নিজে মমতাকে ফোন করেছিলেন। মনমোহনও সিকিমে গিয়ে রাজ্যপাল ও চামলিংয়ের সঙ্গে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে একপ্রস্ত কথা বলেছেন। তিস্তায় যে এখন জলের আকাল, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীও সে কথা জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
তিস্তা চুক্তিতে জলের শতকরা ৫০ ভাগ দাবি করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এখন গাজলডোবা ব্যারেজ থেকে শতকরা ২৫ ভাগ জল বাংলাদেশকে দেওয়ার কথা চলছে। বাংলাদেশ সরকার এখন ওই প্রস্তাব বিবেচনা করছে বলে খবর। কারণ তারাও বোঝে, এর বেশি জল দিলে পশ্চিমবঙ্গে সমস্যা দেখা দেবে। বাঁধ থেকে জল যখন ছাড়া হয় এবং তা যখন মূল নদীতে গিয়ে মেশে, তখন জলের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে যায়। তা ছাড়া বিভিন্ন শাখানদী থেকেও জল এসে মেশে মূল নদীতে। ফলে খাতায়-কলমে থাকা শতকরা পঁচিশ ভাগ জল অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। তাই রাজ্যের যুক্তি, বাংলাদেশ মোটেই বঞ্চিত হবে না। তবে ইতিমধ্যেই মমতা জলবণ্টন নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার আগে মমতা কৃষ্ণের সঙ্গে বৈঠকে রাজি হবেন কি না, তাই এখন দেখার।
এর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অম্বিকা সোনি এক দফায় কলকাতা এসে মমতার সঙ্গে তিস্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। পরিবেশ মন্ত্রী জয়রাম রমেশের সঙ্গেও যে মমতার একটা সুন্দর বোঝাপড়া রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তা জানেন। কিন্তু বিষয়টি মূলত বিদেশ মন্ত্রকের। তিস্তা চুক্তি না হওয়ার ‘ব্যর্থতার’ জন্য বিদেশ মন্ত্রককেও অনেকে দায়ী করছেন। প্রধানমন্ত্রী তাই চান, বরফ গলানোর প্রচেষ্টা আগে বিদেশমন্ত্রীই করুন। তাঁর সফরে কাজ না হলে অম্বিকা সোনি বা জয়রাম রমেশকে দৌত্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
আজ বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকেও তিস্তা নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকার সমালোচনা করা হয়েছে। দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী আজ বলেন, “এক দিকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করে বাংলাদেশের হাতে জমি তুলে দিয়েছেন। অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করে এগোনোয় তিস্তা চুক্তিটিই ভেস্তে যায়। ফলে ক্ষতি হয় ভারতেরই।” গোটা বিষয়টি নিয়ে আগামী দিনে মনমোহন সরকারের উপর চাপ বাড়াতে চাইছে বিজেপি। বিরোধী দলের এই চাপ সামলে কেন্দ্র শরিক মমতাকে তিস্তা চুক্তিতে রাজি করাতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার। |