টু-জি ঝড় সামলে সনিয়ার সামনে তেলেঙ্গানা
টু-জি বিতর্ক নিয়ে মন্ত্রিসভার অন্দরের ঝড় আপাতত সামলে এ বার তেলেঙ্গানার আগুন নেভাতে সক্রিয় হলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।
পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে গত ১৮ দিন ধরে অচলাবস্থা চলছে তেলেঙ্গানায়। কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াতে আজ আবার সেখানে বন্ধও পালিত হয়েছে। সমস্যা সেখানেই থেমে নেই। তেলেঙ্গানার কংগ্রেস নেতারাই এখন প্রকাশ্যে কেন্দ্রের সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়ে সনিয়ার হস্তক্ষেপ দাবি করছেন। শুধু তাই নয়, চন্দ্রশেখর রাওয়ের মতো তেলেঙ্গানাপন্থীরা এ বার হায়দরাবাদ থেকে আন্দোলনকে রাজধানী দিল্লিতে এনে ফেলতে কোমর বাঁধছেন। সেই লক্ষ্যেই চন্দ্রশেখর রাও বা তাঁর ছেলে কে টি রাও আগামিকাল ৪০ জন অনুগামীকে নিয়ে দিল্লি আসছেন। তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানানো ছাড়াও রাজধানীর পথে আন্দোলন শুরু করতে চান।
এই পরিস্থিতিতে তেলেঙ্গানার সঙ্কট মোকাবিলার রাশ আজ নিজের হাতেই তুলে নিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাসভবনে এ ব্যাপারে কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকে এ দিন নেতৃত্ব দেন তিনি। তার আগে আজ প্রথমে অন্ধ্রপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সনিয়া। অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানার কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর সনিয়াকে আজ একটি রিপোর্টও পেশ করেছেন গুলাম নবি। পরে কোর গ্রুপের বৈঠকে ওই রিপোর্টটি সামনে রেখেই তেলেঙ্গানার বিষয়ে আলোচনা করেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সেখানে যদিও আজ তেলেঙ্গানা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সনিয়ার পরামর্শ, এ ব্যাপারে সর্বদল বৈঠক ডাকার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখুক সরকার। পরিস্থিতির বিচার করে আগামিকাল দুপুরে ফের আলোচনায় বসতে পারেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
তেলেঙ্গানা পৃথক রাজ্য গঠন নিয়ে চিদম্বরমের ঘোষণার পরে যখন তুমুল জলঘোলা হয়, তার পরে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিকই করে ফেলেছিলেন, তেলেঙ্গানা গঠন সম্ভব নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের ধারণা, বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিবেচনা করা উচিত। তাঁরা আরও বলছেন, একমাত্র তেলেঙ্গানা পৃথক রাজ্য গঠিত হলেই অন্ধ্রের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব।

উবাচ চিদম্বরম

• স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে এমন ঘটনার কথা মনে করতে পারছি না।
• সত্যি কথা বলতে কী, আমি খুব ভুলো। স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল।
• ভুলে তো যাই-ই, আবার ভাল গুনতেও পারি না।
• আমি সবে গোনা শিখছি।
• আপনাকে কাগজের পাতা ভরাতে হবে! প্রশ্ন করে যান।
• স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিষয়ে কিছু এই প্রশ্নে পেলাম না। জবাব হচ্ছে, কোনও জবাব নেই।
• স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে এমন কিছুর কথা মনে করতে পারছি না।
• এটা তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিষয়ে কোনও প্রশ্ন নয়।
• একেবারেই নয়। দেশে এক জন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সব সময়ই ছিলেন এবং থাকবেন।

দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে।
সূত্র: পিটিআই

বস্তুত, গত ১৮ দিন ধরে পৃথক রাজ্যের দাবিতে তেলেঙ্গানায় তুমুল অসন্তোষ ও অচলাবস্থা চলছে। কিন্তু টু-জি বিতর্ক জাতীয় রাজনীতিতে এতটাই ছেয়ে ছিল যে, তেলেঙ্গানা তাতে কিছুটা চাপা পড়ে যায়। টু-জি বিতর্কটিও যে পুরোপুরি মিটেছে, তা নয়। গত কাল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, টু-জি বিতর্ক ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’। কিন্তু এ দিনও তাঁকে প্রশ্ন শুনতে হয়, গত কয়েক দিনে তিনি কত বার ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন? জবাবে চিদম্বরম বলেন, তাঁর স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে গিয়েছে। গুনতির হিসাবও তিনি ইদানীং ভুলে যাচ্ছেন। তবে এ ভাবে তিনি সমালোচনা এড়াতে পারেননি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট আজ চিদম্বরমের ইস্তফা দাবি করেন। তা ছাড়া সরকারকে আইনি লড়াই এখনও চালিয়ে যেতে হবে। আপাতত সুরাহা বলতে শুধু, সরকারের অন্দরমহলের লড়াই থেমেছে। থামিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। এ বার সনিয়াকে সক্রিয় হতে হয়েছে তেলেঙ্গানার সঙ্কট সমাধানের জন্য। কারণ, চিদম্বরমের ওপর তেলেঙ্গানা প্রশ্নে আস্থা প্রকাশ করছেন না কংগ্রেস নেতৃত্বই। কেশব রাওয়ের মতো তেলেঙ্গানার কংগ্রেস নেতারাও প্রকাশ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা শুরু করেছেন।
তবে টু-জি বিতর্ক নিয়ে মন্ত্রিসভার ভিতরের ঝড় সামাল দেওয়া যতটা সহজ ছিল, তেলেঙ্গানার সমাধান সূত্র বের করা ততটাই কঠিন। কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, তেলেঙ্গানা প্রশ্নে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনে যে প্রশ্ন ও আশঙ্কা ছিল, তা এখনও রয়েছে। তা হল, পৃথক রাজ্যের দাবি মেনে নিলে যদি বাকি অন্ধ্রপ্রদেশ জুড়ে অসন্তোষ দেখা দেয়, তখন কী করবে কেন্দ্র? তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবি মেনে নিলে দেশের বাকি অংশ থেকেও একই রকম দাবি উঠবে বলে আশঙ্কা। কংগ্রেসের অন্য অংশের নেতাদের অবশ্য মত, তেলেঙ্গানার সঙ্গে দেশের অন্য অংশে পৃথক রাজ্যের দাবিগুলি এক পংক্তিতে ফেলা যায় না। পৃথক তেলেঙ্গানার দাবি গত পঞ্চাশ বছর ধরে রয়েছে। ফলে সেই দাবি মেনে নেওয়ার ঝুঁকি কংগ্রেস নিতেই পারে।
তেলেঙ্গানা-বিতর্কে ধুঁয়ো দেওয়া শুরু করেছে বিজেপিও। এ দিন দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী এ দিন বলেন, ২০০৪ সালের ভোটে (তখন তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি কংগ্রেসের শরিক ছিল) তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, জিতলে তেলেঙ্গানা পৃথক রাজ্য গঠন করবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হয়নি। বিজেপির দাবি, যত শীঘ্র সম্ভব এই কাজ সেরে ফেলা হোক। এই পরিস্থিতিতে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত না শুনিয়ে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার আরও একটা চেষ্টা করতে চাইছেন সরকার ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। সে জন্যই সর্বদল বৈঠক ডাকার ভাবনা শুরু হয়েছে। তবে সর্বদল বৈঠকে বাকি রাজনৈতিক দলগুলি কতটা সাড়া দেবে, সংশয় রয়েছে তা নিয়েও। বরং তারা দাবি করতে পারে, আগে কংগ্রেস তার অবস্থান জানাক, তার পর সর্বদল বৈঠক হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.