এটিএম কাউন্টারের সিসিটিভি-র ফুটেজে দেখা যায়, এক ব্যক্তি যন্ত্র থেকে টাকা তুলছেন। ওই ব্যক্তিকে দেখেই চিনতে পারেন কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের ব্যাঙ্ক-জালিয়াতি দমন শাখার এক তদন্তকারী অফিসার। ২০০০-এ জালিয়াতি দমন শাখার হাতে গ্রেফতার হয় অরিন্দম রায় নামে ওই ব্যক্তি। খটকা লাগে অফিসারের। কারণ, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এক মহিলা ব্যাঙ্ক-জালিয়াতির যে অভিযোগ করেন, তাতে অভিযুক্ত তিন ব্যক্তির এক জনের সঙ্গে মিলছে অরিন্দমের চেহারা। শেষে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ব্যাঙ্ক-জালিয়াতি দমন শাখার অভিযানে তিন শাগরেদ-সহ অরিন্দম ধরা পড়ে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন জানান, কাজরী সাধ্য নামে ওই মহিলার অভিযোগেই ধরা হয় অশোক দত্ত, সন্দীপ শূর, বরুণকুমার নাগ ও অরিন্দমকে। নাম ভাঁড়িয়েছিল সকলেই। পুলিশ জেনেছে, নবদ্বীপ ও রায়গঞ্জেরও দু’জন প্রতারিত হন।
পুলিশ জানায়, আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাসিন্দা, কাপড়ের ব্যবসায়ী কাজরীদেবীর এক কোটি টাকার দরকার ছিল। খবরের কাগজে ব্যাঙ্কের সাহায্যে অল্প দিনে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রতি-সহ বিজ্ঞাপন দেখেন তিনি। কাজরীদেবী তাতে দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল করলে সুদীপ্ত রায় পরিচয়ে এক জন কথা বলে। পুলিশের দাবি, জেরায় সন্দীপ স্বীকার করেছে, সে-ই সুদীপ্ত। কাজরীদেবীকে বলা হয়, প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নথি নিয়ে উল্টোডাঙার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় আসতে।
পুলিশকে কাজরীদেবী জানান, সে দিন ওই ব্যাঙ্কের বাইরে দাঁড়ানো গাড়িতে দু’জন ছিল। সন্দীপ কাজরীদেবীর সঙ্গে বাকি দু’জনের পরিচয় করিয়ে বলে এক জনের নাম অশোক দে (অশোক দত্ত), অন্য জন নিত্যানন্দ হালদার (অরিন্দম)। অরিন্দমকে ব্যাঙ্কের পদস্থ কর্তা ও অশোককে ‘ভ্যালুয়ার’ বলে দাবি করে সে। কাজরীদেবীকে চেকবই নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর ওই ব্যাঙ্কের স্ট্র্যান্ড রোডের শাখায় যেতে বলা হয়। ওই শাখায় গেলে সন্দীপ কাজরীদেবীকে পাঁচটি ‘অ্যাকাউন্ট পেয়ি’ চেকে ৫ লক্ষ টাকা কাটতে বলে। চেকে নাম বা অ্যাকাউন্ট নম্বর লিখতে বারণ করে। ঋণের বন্দোবস্তের ‘আশ্বাস’ পেয়ে কাজরীদেবী চেক কেটে দেন।
পরে কাজরীদেবী জানতে পারেন, তাঁর ব্যাঙ্কের সিআইটি রোডের শাখা থেকে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা তোলা হয়। সন্দেহ হওয়ায় সন্দীপের মোবাইলে কল করলে সেটি বন্ধ পান। প্রতারিত হয়েছেন বুঝে পুলিশে খবর দেন তিনি। তদন্তে নামেন সাব-ইনস্পেক্টর জিতেন্দ্র প্রসাদ। এ দিকে, সিআইটি রোড শাখার সিসিটিভি-র ফুটেজে অরিন্দমকে দেখেন ব্যাঙ্ক-জালিয়াতি দমন শাখার অন্য অফিসার মৃগাঙ্কমোহন দাস। সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলকণ্ঠ রায় নামে আরও দুই অফিসারকে নিয়ে তৈরি হয় তদন্তকারী দল। পুলিশের দাবি, জেরায় অরিন্দম জানায়, স্ট্র্যান্ড রোডের শাখা থেকে সোজা তারা যায় সিআইটি রোডে। চেকগুলিতে যে অ্যাকাউন্ট নম্বর লেখা হয়েছে, সেটি বরুণ ওরফে কৌশিক ভৌমিকের নামে খোলা হয়। বরুণ রেলকর্মী। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য যে প্রয়োজনীয় নথিগুলি লাগে, তার একটিতে ছিল কৌশিকের নাম লেখা ইলেকট্রিক বিল। কিন্তু বিলে ‘কনজিউমার নম্বর’-এর জায়গায় লেখা ছিল অশোকের নম্বর। বরখাস্ত হওয়া সরকারি কর্মী অশোকের বেলেঘাটার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, ন’মাস ধরে সে রয়েছে মহাত্মা গাঁধী রোডের একটি গেস্ট হাউসে। সেখানে খোঁজ মেলে মুচিপাড়ার অরিন্দমেরও। অরিন্দম তেমন কিছু করে না। গেস্ট হাউস থেকেই ধরা হয় তাদের। জেরা করে খোঁজ মেলে সন্দীপ ও বরুণের। সন্দীপ অটোচালক। ধৃতদের কাছ থেকে নগদ সাড়ে চার লক্ষ টাকা, একটি গাড়ি ও প্রচুর জাল নথি মিলেছে। |