গতকাল উঠেছিল ২৫২ পয়েন্ট। আর আজ, শুক্রবার এক ধাক্কায় ২৪৪ পয়েন্ট পড়ল সেনসেক্স। সাম্প্রতিক সময়ে এই রকমই লাগাতার ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে চলেছে ভারতের শেয়ার বাজার। যেখানে লগ্নিকারীদের মনের যাবতীয় ভয় ও সংশয় খুব স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠছে বার বার। এ দিন সেনসেক্স থেমেছে ১৬.৪৫৩.৭৬ পয়েন্টে। নিফটিও ৭২ পয়েন্ট পড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,৯৪৩ অঙ্কে।
বৃহস্পতিবার খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ফের ১০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছনোয় (১৭ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে ৯.১৩%), লগ্নিকারীদের ‘ভয়’ পাওয়া এই মুহূর্তে অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞেরা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টানা ১২ বার সুদ বাড়ানোর পরেও মূল্যবৃদ্ধির গতি অব্যাহত থাকাকে গতকাল ‘গুরুতর’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নিজেও। অনেকেরই আশঙ্কা, এর ফলে আগামী দিনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আরও এক বার সুদ বাড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল হল। যা এ দিনের বাজারকেও সন্ত্রস্ত করেছে।
এর পাশাপাশি, সূচকের পতনের পিছনে কাজ করেছে আরও কিছু কারণ। যেমন, ১) অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্স এডিএজি গোষ্ঠীর শেয়ার দরে ধস। টুজি কেলেঙ্কারিতে রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান হিসাবে অনিলের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবারই জানিয়েছে সিবিআই। ফলে এ দিন তাঁর গোষ্ঠীর সংস্থা রিলায়্যান্স ক্যাপিটালের দর ১২.২৪%, রিল কমের দর ৭.৬০% ও রিলায়্যান্স ইনফ্রা-র দর ৭.৪৩% পড়ে যায়। ২) কোল ইন্ডিয়ার শেয়ার দরে ৫.১৫% পতন। যার কারণ মন্ত্রিসভার নতুন খনন বিলে সায়। এতে মুনাফা ও রয়্যালটির একাংশ খনন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাজারের আশঙ্কা এতে মুনাফা কমবে সংস্থাগুলির।
অবশ্য দেশের অন্দরের সমস্যাই যে শেয়ার বাজারের গতি রোধের একমাত্র কারণ তা বলা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে ইউরোপ ও মার্কিন মুলুকের উপর চরম নির্ভরশীল এ দেশের প্রতিটি শেয়ার সূচক। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির আর্থিক সঙ্কট নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রতি মুহূর্তে অনিশ্চিত করে দিচ্ছে এ দেশের বাজারের গতিপথকেও।
এ দিন অবশ্য প্রথম থেকেই সেনসেক্স ছিল অস্থির। দিনের শুরুতে তা নীচের দিকে মুখ করে থাকলেও দুপুরের দিকে অনেকটা উপরে ওঠে। এবং এক সময় তা ছুঁয়ে ফেলে ১৬,৭৪৫.১৬ পয়েন্টের উচ্চতা। তবে শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি সূচক। যার কারণও সেই ইউরোপই। এ দিন ইউরোপের বেশির ভাগ বাজার খোলার পরই পড়তে শুরু করে। যার প্রভাব পড়ে ভারতে। ফের নিম্নমুখী হয় বাজার। আজকের পর জুলাই-সেপ্টেম্বর, এই তিন মাসে সেনসেক্সের মোট পতনের হার দাঁড়াল ৯.৬%। গত তিন বছরে যা সর্বোচ্চ। এর আগে ২০০৮-এর এই একই ত্রৈমাসিকে সূচকটি হারিয়েছিল ১০.৪%। |