সাবেক রীতি, ঠাঁটবাট বজায় রেখে এখনও কুণ্ডলা গ্রামে তিন তরফের দুর্গাপুজো হচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দারা ওই তিনটি পুজোকে ঘিরেই আনন্দে মেতে ওঠেন। তিন তরফের পুজো এলাকায় জমিদার বাড়ির পুজো নামেই পরিচিত।
ময়ূরাক্ষী নদীর পাশে এই গ্রাম। খুব প্রাচীন গ্রাম। গ্রামের নানা প্রান্তে অনেকগুলি শিব মন্দির, রথ মন্দির, সর্বমঙ্গলা মন্দির, নারায়ণ মন্দির রয়েছে। রয়েছে তিনটি দুর্গা মন্দির। বড় তরফ, মেজ তরফ ও ছোট তরফের দুর্গা মণ্ডপ। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই মন্দিরগুলিতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে।
বড় তরফের বিভুদান মুখোপাধ্যায় ও ছোট তরফের লক্ষ্মীনারায়ণ মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “আধুনীকতার ছোঁয়া বাঁচিয়ে আমরা সাবেক রীতি নীতি মেনেই পুজো করে আসছি। জমিদার আমলে গ্রামের বিরাট জলাশয় ধরম সায়রে শোভাযাত্রা করে ঘট ভরতে যাওয়া হত। এখনও ঘটা করে সেখান থেকেই ঘট ভরে আনা হয়। বিসর্জনও জাঁকজমকপূর্ণভাবে করা হয়। এখনও বিসর্জনের আগে প্রতিমা কাঁধে নিয়ে ডাঙাল মাঠে বাসিন্দারা উল্লাস করেন। নবমীর দিন কুণ্ডলা-সহ আশপাশের গ্রামের হাজারখানেক বাসিন্দা পাতপেড়ে খিচুরি ভোগ খান। জমিদারি আমল থেকে এই রীতি আজও চলে আসছে। পুজো হয় বৈষ্ণবমতে। |
এখানে পুজো শুরুর পিছনে একটা কাহিনি রয়েছে। বড় তরফের বংশধর সাঁইথিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁরা প্রথম থেকে কুণ্ডলার বাসিন্দা নয়। প্রায় ১০ পুরুষ তাঁরা এখানে বাস করছেন। তাঁদের আদি বাস ছিল বর্ধমান জেলার কাটোয়ার চিটাহাটি-গুড়পাড়া গ্রামে (বর্তমানে সিতাহাটি)। সেখান থেকে এক বংশধর প্রভুরাম মুখোপাধ্যায় এক দিন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। ঘুরতে ঘুরতে তিনি এই কুণ্ডলা গ্রামে চলে আসেন। এখানেই তিনি সংসার পাতেন। তাঁর তিন ছেলে হাটুরাম, দেবকীরাম ও বিজয়রাম দাদনের ব্যবসা করে প্রভূত সম্পত্তির মালিক হন। প্রভুরামের নির্দেশে তাঁর ছেলেরা দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেই প্রথম কুণ্ডলা গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু হয়। এর কয়েক বছর পরে বর্ধমান রাজার কাছ থেকে তাঁরা পত্তনী পেয়ে জমিদার হন। পুজো ভাগ হয়ে ছোট তরফ দুর্গাপুজো শুরু করেন। তারও কয়েক বছর পরে মেজো তরফ পুজো শুরু করে। সেই থেকে জমিদার বাড়ির তিন তরফের পুজো হয়ে আসছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবোত্তর সম্পত্তি থেকে পুজোর খরচ জোগাড় করা হয়। তাছাড়া পরিবারের সদস্যেরা বাড়তি খরচ বহন করেন।
বাড়ির বধূ সুধাদেবী, নমিতাদেবীরা বলেন, “পুজো এলেই আমাদের আত্মীয়েরা বাড়িতে আসেন। দূরদূরান্তে থাকা গ্রামবাসীরাও ঘরে ফেরেন। সবাই মিলে আমরা পুজোয় মেতে উঠি।” |