ফের আক্রান্ত আল কায়দা!
ওসামা বিন লাদেনের পর এ বার নিহত আনোয়ার আল অওলাকি। আরব দুনিয়ায় ‘আল কায়দার মুখ’ হিসেবেই পরিচিত ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত, জন্মসূত্রে মার্কিন এই মৌলবি। আজ ইয়েমেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, এক অভিযানে নিহত হয়েছেন আল অওলাকি। পরে মার্কিন প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ড্রোন হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন এই জঙ্গি।
আমেরিকার চোখে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ আল অওলাকিকে হত্যার জন্য সিআইএ-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মার্কিন প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, এই প্রথম জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত থাকায় কোনও মার্কিন নাগরিককে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল হোয়াইট হাউস। ওবামা পরে এক বিবৃতিতে বলেন, “আল কায়দা এবং তার সহযোগীদের জন্য এটা মোক্ষম ধাক্কা। ওদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করার দিকে আরও এক ধাপ এগোনো গেল।”
ওয়াশিংটনে ইয়েমেনি দূতাবাসের এক মুখপাত্র জানান, স্থানীয় সময় সকাল ৯:৫৫-তে শুরু হয় এই অভিযান। রাজধানী সানার পূর্বে খাশেফ শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে নিহত হন তিনি। ২০০৬-এ আল কায়দার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল ইয়েমেন সরকার। ২০০৭-এ মুক্তি পেয়ে ইয়েমেনেই আত্মগোপন করে ফের শুরু করেন জঙ্গি কার্যকলাপ। |
পশ্চিমি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, ওসামা বিন লাদেনের পর আল অওলাকির নিহত হওয়াটা নিঃসন্দেহে স্বস্তি দেবে আমেরিকাকে। কারণ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাঁকেই ‘সব থেকে বড় বিপদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল আমেরিকা। জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক, কলোরাডো স্টেট এবং সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রটি পশ্চিমি দেশে আল কায়দার ভাবধারা প্রচারে ছিলেন এক নম্বর। আল কায়দার কাজে এই সব দেশ থেকে নতুন সদস্যদের নিয়োগে তাঁর দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। ব্রিটেনের গোয়েন্দাকর্তা জন সওয়ার্সের কথায়, “ইয়েমেনের গোপন ডেরা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে চমৎকার ইংরেজিতে জঙ্গি ভাবধারা প্রচার করেন আনওয়ার আল অওলাকি।”
তা ছাড়াও, আমেরিকায় বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি কার্যকলাপে ভূমিকা ছিল আল অওলাকির। ৯/১১-য় জড়িত জঙ্গিদের আমেরিকায় আশ্রয় খুঁজতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। ২০০৯-এ ডেট্রয়েটগামী একটি বিমান উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে গ্রেফতার হয় এক নাইজিরীয় যুবক। আল অওলাকিই তাকে এই কাজে নিয়োগ করেছিলেন বলে অভিযোগ। ওই বছরই টেক্সাসের একটি সেনা ঘাঁটিতে গুলি চালিয়ে তেরো জনকে হত্যা করেন এক সেনা-চিকিৎসক। এই ঘটনার পরিকল্পনাও ছিল আল অওলাকিরই। আমেরিকার ভিতরেও বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়ে তোলার কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই আল অওলাকি-নিধনকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যতম বড় সাফল্য বলে মানছে ওবামা-প্রশাসন। মার্কিন কংগ্রেসের একটি কমিটির চেয়ারম্যান পিটার কিং আজ বলেন, “গত কয়েক বছরে ওসামার থেকেও সাংঘাতিক হয়ে উঠেছিল আল অওলাকি। এটা প্রেসিডেন্ট ওবামার জন্য একটা দারুণ উপহার।”
ইয়েমেনের রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতেও আল অওলাকির নিহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লা সালের ক্ষমতা ছাড়াকে কেন্দ্র করে ইয়েমেন ও আমেরিকার মধ্যে টানাপোড়েন চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আজকের এই ‘সাফল্য’ দু’দেশের সম্পর্ক মেরামত করতে সাহায্য করে কি না, সেটাই এখন দেখার। |