অরণ্যই মানবসভ্যতার সম্পদ।
এই চিরন্তন সত্য সকলকে বোঝাতে রামায়ণের অরণ্যকাণ্ডের আদলে গড়ে উঠেছে মণ্ডপ। পুজো বাঁশ দিয়ে মণ্ডপ তৈরির পাশাপাশি দেবীর গয়নাতেও থাকছে বাঁশের কারুকার্য।
শক্তিগড়ের সর্বজনীন পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রায় তিন মাস আগে থেকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে ১৯ জন শিল্পী দিন-রাত এক করে কাজ করে চলেছেন। প্রধান শিল্পী স্বপন আচার্য বলেন, “রাজ্য জুড়ে এই ধরনের বাঁশের নক্সা তৈরির কাজ আমরাই করে থাকি। তৈরি হচ্ছে পদ্মফুল, লতাপাতা, রামচন্দ্র, পশুপাখির নানা ধরনের ছবি। প্লাইউডের উপর বাঁশ কেটে তৈরি করা হচ্ছে সমস্ত মণ্ডপসজ্জার উপকরণ।”
বর্ধমানের শক্তিগড় ল্যাংচার জন্যই বিখ্যাত। কাছেই বড়শূলে এখন বর্ধমান শহরের সঙ্গে পাল্লা দেবার মত মণ্ডপ আর প্রতিমা তৈরি করা হয়। তাই ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে অনেকেই সোজা পাড়ি দেন বড়শূলে। শক্তিগড় সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির সভাপতি দিলীপ সাঁইয়ের কথায়, “এ বার কিন্তু মানুষকে বর্ধমান থেকে বড়শূলের পথে থমকে দাঁড়াতে হবেই। কারণ এ বারই প্রথম আমরা থিম পূজো শুরু করেছি।”
এত কিছু থাকতে আপনারা রামায়ণের অরণ্যকাণ্ডকে বাছলেন কেন? দিলীপবাবুর জবাব, “অরণ্যেই রামচন্দ্র সীতাকে হারান। রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। অরণ্যেই তিনি পেয়েছিলেন সুগ্রীবের বন্ধুত্ব। তাছাড়া অরণ্যই তো মানবজাতির সম্পদ। তাই গাছ কাটা, বা অরণ্যে ধ্বংস রুখতে এই আমাদের প্রচেষ্টা।”
যেহেতু দেবী অরণ্যনিবাসী, তাই তাঁর আর সন্তানদের গাত্রবর্ণ সবুজ। শরীরে বাঁশের গয়না। মণ্ডপের ভেতরে থাকবে বাঁশের তৈরি ঝাড়বাতি। মণ্ডপসজ্জার কাজে ব্যস্ত শিল্পী রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, “মণ্ডপের ভেতরে ঢুকে দর্শকদের মনে হবে, সত্যিই অরণ্যের ভেতরে ঢুকে পড়েছেন তাঁরা।”
রামচন্দ্রের অরণ্যকাণ্ড দেখতে থমকে দাঁড়বেন পথচলতি দর্শক, আশায় পুজোকর্তারা। |