কোথাও ঐতিহাসিক মন্দিরের স্থাপত্য, কোথাও আধুনিক মন্দিরের শিল্প শৈলী তুলে ধরার প্রয়াস আবার কোথাও বা আধুনিক প্রজন্মকে প্রাক্-চাকা যুগের বাহন পাল্কির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এই সব থিমেই এ বার তাক লাগাবে শহরের তিনটি বিগ বাজেটের পুজোকর্তারা।
এক বছর বিদেশে কাটিয়ে ফের দেশে ফিরছে মার্কনি দক্ষিণপল্লি সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি! গত বছর তাঁরা কম্বোডিয়ার অঙ্গন থমের বেয়ন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছিলেন। এ বার ৫১তম বর্ষে তাঁরা তুলে ধরছেন গজনীর সুলতান মামুদের হাতে বার বার আক্রান্ত গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী। ব্যবহার করা হচ্ছে থার্মোকল, প্লাইউড, কেমিক্যাল বিহীন রং, প্লাস্টার অফ প্যারিস, সিমেন্ট, বাঁশ ও কাঠ। এর আগেও অবশ্য নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ও আজিন্ঠা গুহার আদলে মণ্ডপ তৈরি করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। এ বার উদোক্তারা স্মরণ করছেন স্বামী বিবেকানন্দকে। থার্মোকলের উপর কাদার প্রলেপ দিয়ে মণ্ডগায়ে বিলে থেকে বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার কাহিনী ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে তাঁর জন্ম সার্ধশতবর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে। এছাড়া আলোক সজ্জ্বাতেও স্বামী বিবেকানন্দের জীবনের নানা মুহূর্ত তুলে ধরা হচ্ছে বলে জানান পুজো কমিটির সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। |
ভিড়িঙ্গি মোড়ের নবারুণ ক্লাবের পুজোয় এ বার মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে দিল্লীর অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে। মাস দেড়েক আগে শুরু হয়ে গিয়েছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। ক্লাবের সম্পাদক সঞ্জয় মহাপাত্র জানান, গত বছর জোর দেওয়া হয়েছিল মহাভারতের কাহিনীর উপর। মহাকাব্যের সঙ্গে আধুনিক প্রজন্মের পরিচিতি করিয়ে দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে অক্ষরধাম মন্দির নিয়ে মানুষের কৌতুহল বেড়েছে। যাঁরা মন্দিরটি ঘুরে দেখার সুযোগ পাননি, তাঁদের জন্য পুরো মন্দিরটি গড়া হচ্ছে এ বার। ৪৪ বছরে পড়া এই পুজোর উদ্বোধন করা হবে পঞ্চমীর দিন। সেই দিন থেকে শুরু হয়ে যাবে মেলাও। দুর্গাপুর তো বটেই, আশপাশের এলাকা থেকেও অনেক মানুষ এই পুজো ও মেলায় ভিড় জমান। পুজো ফুরিয়ে গেলেও মেলার রেশ চলে আরও বহু দিন।
ফুলঝোড় সর্বজনীনের এ বারের থিম ‘পাল্কি চলে রে’। ইট, বালি ও পাথরকুচি ব্যবহার করে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। মা দুর্গা থাকছেন সাবেকি রাজবাড়িতে। সামনে থাকছে বিশালাকার পাল্কি। চার জন বাহকও থাকছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির শিল্পী চঞ্চল আচার্য মণ্ডপ তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন। উদ্যোক্তারা জানান, কালের বিবর্তনে হারিয়ে গিয়েছে পাল্কি। অথচ প্রাক চাকা যুগে রাজারা তো বটেই, সাধারণ মানুষও পালকি ব্যবহার করতেন। পরের দিকে শুধু বিয়েতে ব্যবহার হত। এখন তাও আর হয় না। আধুনিক প্রজন্মকে পাল্কির কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই এই থিম বেছে নিয়েছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, আগের বছর নারকেলের বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছিলেন তাঁরা। কোনও রাসায়নিক রং ব্যবহার না করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। ভিড় যে তিন মণ্ডপেই জমবে, বিশেষ সন্দেহ নেই। |