|
|
|
|
পুজোয় জামা চাই না, টাকা তুলে বন্ধুকে দিল ছাত্ররা |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
ওরা কেউই পুজোয় নতুন পোশাক চায় না। কোথাও বেড়াতেও যাবে না। প্রিয় বন্ধু সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক, একটাই প্রার্থনা। বন্ধুর চিকিৎসার জন্য ওরা তহবিল গড়েছে। নতুন জামাকাপড়ের টাকা জমা পড়ছে সেই তহবিলে।
ওরা সবাই ঝাড়গ্রামের কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার ছাত্র। ওদেরই এক সহপাঠী সুব্রত বারিক অস্থির ক্যানসারে ভুগছে। বৃহস্পতিবারই চিকিৎসার জন্য মুম্বই রওনা হয়েছে সুব্রত।
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী, অন্য স্কুলের পড়ুয়া-শিক্ষক, সমাজের নানা স্তরের মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করছে ওরা। আপাতত সংগৃহীত হাজার পঞ্চাশেক টাকা নিয়েই পরিজনেরা সুব্রতকে নিয়ে রওনা হয়েছেন মুম্বই।
সুব্রতর বাড়ি ঝাড়গ্রামের বাঁধগোড়ার নেকড়াশুলি গ্রামে। বাবা নিতাইবাবু বাজারে সব্জি বিক্রি করেন। যৎসামান্য আয়। একমাত্র ছেলের চিকিৎসা করাতে না পারার যন্ত্রণা কুরে কুরে খাচ্ছিল। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়েই সুব্রতর ক্যানসার ধরা পড়ে। এক বার ভেলোরের হাসপাতালে ছেলেকে নিয়েও গিয়েছিলেন নিতাইবাবু। |
|
আমরা করব জয়। চিকিৎসার জন্য মুম্বই রওনা হওয়ার
আগে বন্ধুদের কাঁধে সুব্রত। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি। |
কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা চালাতে পারছিলেন না। নিজের পরিণতি সম্পর্কে এক রকম নিশ্চিত হয়েই বুকে পাথর চেপে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় সুব্রত। ভাল ফল করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় কুমুদকুমারীর বিজ্ঞান শাখায়। মাস তিনেকের মধ্যেই সহপাঠীদের সবারই প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠা সুব্রত। কিন্তু নিজের অসুখের কথা বন্ধুদের জানায়নি।
মাস খানেক আগে বন্ধুরা মিলে খুনসুটির সময়ে আচমকা এক জন সুব্রতর পিঠ চাপড়ে দেয়। আর তখনই যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠে সুব্রত। অপ্রস্তুত সহপাঠীরা জানতে পারে ওর অসুখের কথা। আর তার পরে ষোলো-সতেরো বছরের ছেলেগুলোই মস্ত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। যে ভাবেই হোক সুব্রতর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করবে ওরা।
ছাত্রদের এই ভাবনা নাড়া দেয় স্কুল-কর্তৃপক্ষকেও। স্কুল-ফান্ডের তিন হাজার টাকা দিয়েই সুব্রতর চিকিৎসার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এক একে সব শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী তহবিলে সাধ্যমতো সাহায্য করেন। আর শুভঙ্কর, সৌরদীপ, অর্পণ, অনিকেতের মতো সুব্রতর বন্ধুরা বাড়িতে জানিয়ে দেয়, এ বার আর ওরা পুজোয় জামা-প্যান্ট চায় না। সেই টাকাটাও ওরা দেবে বন্ধুর চিকিৎসার জন্য। আরও অনেক স্কুল-প্রতিষ্ঠান, মানুষজনের কাছেও সাহায্যের আবেদন নিয়ে পৌঁছয় শুভঙ্করেরা। তার ফলেই মাসখানেকের মধ্যে জোগাড় হয় ৫০ হাজার টাকা। সৌরদীপরা জানিয়েছে, ওদের লক্ষ্য কম করেও এক লক্ষ টাকা। পুজোর ছুটিতেও অর্থ সংগ্রহে ছেদ পড়বে না।
স্কুলের ইংরেজির মাস্টারমশাই প্রদ্যোৎ দাসও জড়িয়ে গিয়েছেন ছাত্রদের এই উদ্যোগে। তিনি বলেন, “বড়রাও যেখানে পাশ কাটিয়ে যেতে পারলেই বাঁচেন, সেই রকম এক সময়ে কিশোর ছাত্রেরা যে জীবনবোধের পরিচয় দিয়েছে তাতেই আশা হয়, পৃথিবীটা সুন্দর থাকবে ওদেরই জন্য।” প্রধান শিক্ষক অনুপ দেও বলেন, “ছাত্রদের এই উদ্যোগকে সম্মান জানাতে পেরে আমরাও গর্বিত।” ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপ কাঁড়ার সুব্রতর চিকিৎসা করেছেন। তিনি বলেন, “ওর সহপাঠীদের উদ্যোগ সমাজের সব স্তরের মানুষকেই অনুপ্রাণিত করছে।”
আর সুব্রতর মা-বাবা রঙ্গলতাদেবী, নিতাইবাবুদের কথায়, “এই ছেলেগুলো আমাদের কাছে সাক্ষাৎ ভগবান। ওদের ভাল হোক।” আর ‘ছেলেগুলো’র প্রার্থনা, “ভাল হয়ে উঠুক সুব্রত।” পুজোয় ওদের সবারই মন পড়ে থাকবে মুম্বইয়ে। ভাল আছে তো বন্ধু! |
|
|
|
|
|