সম্পাদকীয় ২...
জেঠামহাশয়
রাসি দার্শনিক ভলতেয়ার বলিতেন, ‘আমি সারা জীবনে একটি টেক্সট মেসেজ-ও করিব না, কিন্তু তুমি যাহাতে যথেচ্ছ মেসেজ করিতে পারো, তাহা নিশ্চিত করিতে আমি আমার শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়িব।’ টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ট্রাই)-র ভলতেয়ারোচিত দার্শনিক প্রজ্ঞা থাকিবার কথা নহে, কিন্তু দেখা গেল, তাহার কাণ্ডজ্ঞানও নাই। মোবাইল ফোনে প্রত্যহ যে অজস্র অবাঞ্ছিত মেসেজ এবং ফোন আসে, তাহা ঠেকাইতে ট্রাই-এর দাওয়াই কোনও মোবাইল নম্বর হইতেই দিনে এক শত-র বেশি মেসেজ পাঠানো যাইবে না। যে দেশের গণতন্ত্রের চনমনে স্বাস্থ্য লইয়া ঢক্কানিনাদের বিরাম নাই, সেই দেশের সরকার এই রকম একটি অলীক নিয়ম কী ভাবে হজম করিতে পারে, ভাবিলে আশ্চর্য হইতে হয়। ট্রাই জানাইয়াছে, তাহারা হিসাব কষিয়া দেখিয়াছে যে মোবাইল গ্রাহকেরা দিনে গড়ে ত্রিশ-চল্লিশটির বেশি মেসেজ করেন না। কাজেই, একশোটি মেসেজের সীমায় কাহারও অসুবিধা হইবার কথা নহে। অতি আপত্তিকর যুক্তি। গড় মানিবার দায় ব্যক্তি-গ্রাহকের থাকিবে কেন? কেহ যদি প্রত্যহ এক লক্ষ মেসেজ পাঠাইতে চাহেন, তাহা তাঁহার অভিরুচি, তাঁহার সিদ্ধান্ত। ট্রাই, বা অন্য কেহ, সেই গ্রাহককে বাধা দিতে পারে না। এই স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তটি কেন, তাহার কারণ অনুমান করা চলে। ইহা রাষ্ট্রের জেঠামশাইপনা। নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ করিবার কু-অভ্যাস রাষ্ট্রের মজ্জাগত। এই সিদ্ধান্ত তাহার ফল। সিনেমায় কোন দৃশ্য থাকিবে না, কোন বইটি বাজারে ছাড়া যাইবে না, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের কোন যৌনতা অ-স্বাভাবিক সবই যেমন রাষ্ট্র ঠিক করিয়া দেয়, দৈনিক টেক্সট মেসেজের সংখ্যাও রাষ্ট্র বলিয়া দিয়াছে। এখন অপেক্ষা, কখন জেঠামশাই বলিয়া দিবেন, কাহাকে ফোন করা চলিবে, আর কাহার সঙ্গে মেলামেশা চলিবে না।
টেলিমার্কেটিং-এর ফোন এবং মেসেজ-এর আধিক্য সত্যই অতি বিরক্তিকর। তাহা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। তাহা কী ভাবে বন্ধ করিতে হইবে, সেই কথাটি যদি ট্রাই-কে বলিয়া দিতে হয়, তবে আর সংস্থাটি রাখিবার প্রয়োজন কী? তবু, বলিয়া দেওয়া যাউক। বাজার নামক একটি প্রতিষ্ঠান ভারতে আছে। পলিটব্যুরোর কর্তারা শুনিলে কুপিত হইতে পারেন, কিন্তু বাস্তব বলিতেছে যে বাজার যথেষ্ট দক্ষ ভাবে কাজও করে। যে সংস্থাগুলি বাণিজ্যিক প্রচারের জন্য টেক্সট মেসেজ পাঠায়, তাহাদের উপর মেসেজ পিছু চড়া কর আরোপ করা হউক। কত মেসেজ পাঠানো হইতেছে, সেই হিসাব রাখা, এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে, নিশ্চয়ই কঠিন নহে। যে সংস্থাগুলি কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করিবে, তাহাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা করা হউক। যে সংস্থাগুলি সরকারকে কর দিবে, তাহাদের মেসেজও কি গ্রাহকের বিরক্তি উৎপাদন করিতে পারে না? অবশ্যই পারে। যাঁহারা কোনও বাণিজ্যিক মেসেজ বা ফোন পাইতে আগ্রহী নহেন, তাঁহাদের নাম নথিভুক্ত করিবার জন্য ‘ডু নট ডিস্টার্ব ডিরেক্টরি’ নামক পঞ্জির ব্যবস্থা আছে। সচেতন গ্রাহকরা তাহাতে নিজেদের নাম নথিভুক্তও করেন। সমস্যা হইল, কোনও প্রচার-সংস্থাই সেই পঞ্জির তোয়াক্কা করে না। এই অভ্যাস বন্ধ করিতে হইবে। উপায় সহজ। পঞ্জিতে নাম নথিভুক্ত থাকা সত্ত্বেও যদি কোনও গ্রাহক কোনও প্রচার-সংস্থার ফোন পান ও অভিযোগ দায়ের করেন, তবে সেই সংস্থার কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করিতে হইবে। অভিযোগ দায়ের করিবার সুব্যবস্থা প্রয়োজন, অভিযোগ জমা পড়িলে ব্যবস্থা করিতে গাফিলতি চলিবে না। ট্রাই এই ব্যবস্থাটুকু করুক। জেঠামশাই হইবার বদলে কর্তব্যপরায়ণ হইলে উপকার হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.