উৎসব শুরুর প্রতীক্ষা এখন কার্যত ঘণ্টার হিসেবে এসে গিয়েছে। তার মধ্যেই দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক পরে এ বার নতুন হাওয়া পুজোর উদ্বোধনেও।
কারণ, সাড়ে তিন দশক পরে এ বার পুজোর উদ্বোধনে থাকছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। গত ৩৪ বছরের বাম শাসনকালে যা দেখা যায়নি কখনও। এ বার দ্বিতীয়া থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত বহু পুজোর উদ্বোধনে থাকছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘুরছেন বিভিন্ন মণ্ডপেও। বিরোধী নেত্রীই হোন বা রেলমন্ত্রী মমতাকে নিয়ে বরাবরই তুমুল আকর্ষণ জনতার। এ বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সেই আকর্ষণ বেড়ে গিয়েছে কয়েকশো গুণ। আর তাই শহর থেকে জেলা সর্বত্রই মমতাকে দিয়ে পুজো উদ্বোধনের একের পর এক অনুরোধ জমা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। দফতর সূত্রের খবর: পরিস্থিতি এমনই যে, দ্বিতীয়া থেকে ষষ্ঠী, দিনে গড়ে পাঁচ থেকে আটটি করে পুজোর উদ্বোধন করবেন মমতা। তবে, সময়াভাবে জেলায় যাওয়া হচ্ছে না তাঁর।
|
বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের পুজো গাইডও উদ্বোধন করেন মমতা। রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী আগে তা করেননি। পুজো গাইডের এটাও কি তা হলে ‘পরিবর্তন’? পুলিশের একটি সূত্র বলছে, সাধারণত যে শিল্পী প্রচ্ছদ আঁকেন, তাঁর হাত দিয়েই গাইডের উদ্বোধন হয়। ঘটনাচক্রে এ বছরের পুজো গাইডের প্রচ্ছদ-শিল্পীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পী দুই অস্তিত্বই মিলেমিশে একাকার। পুজোর উদ্বোধনে এ বার থাকছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও। অতীতে অনেক রাজ্যপালই এই ধরনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। ব্যতিক্রম ছিলেন পূর্ববর্তী রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। তাঁর সময়কালে কোনও পুজোর উদ্বোধনেই যাননি। গত বছর এম কে নারায়ণন দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরে বেশ কয়েকটি পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। রাজভবন সূত্রের খবর, এ বারও তিনি তৃতীয়া থেকে পঞ্চমী, তিন দিনে ১০টি পুজোর উদ্বোধন করছেন।
|
এ ছাড়া, বরাবরের মতোই পুজোর উদ্বোধনে চাহিদা রয়েছে সাহিত্যিক থেকে অভিনেত্রী, শিল্পী, শিল্পপতি মায় ভিন্ রাজ্যের রাজনীতিকদেরও। পুজো উদ্বোধনে দৌড়চ্ছেন রাজ্যের বাকি মন্ত্রীরাও। দ্বিতীয়ার রাত থেকেই খুলে গিয়েছে শহরের বেশ কিছু মণ্ডপের দরজা। উদ্বোধন শুরু করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও। বাকি পুজোগুলির অধিকাংশ পঞ্চমীর মধ্যে উদ্বোধন হয়ে যাবে। একাধিক পুজোকর্তা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, চতুর্থী থেকেই বিভিন্ন মণ্ডপের সামনে হাজির হন অগণিত মানুষ। দর্শনার্থীদের বিরাট লাইনও অস্বাভাবিক নয়। সে কথা মাথায় রেখে ষষ্ঠীর দু’রাত আগে থেকেই সাধারণের জন্য মণ্ডপ খুলে দিচ্ছেন তাঁরা। এ বছর পঞ্চমী ও ষষ্ঠী সপ্তাহের শেষে হওয়ায় গত বারের তুলনায় ভিড় বেশি হবেও বলেও পুজোগুলির আশা।দ্বিতীয়ায় উদ্বোধন হয়েছে ৯৫ পল্লি-সহ বেশ কিছু পুজোর। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেন চক্রবেড়িয়া, চেতলা অগ্রণী-সহ কয়েকটি পুজো। এ দিন রাত থেকেই খুলে গিয়েছে হাতিবাগান নবীনপল্লি ও হাতিবাগান সর্বজনীনের মণ্ডপও। আজ, চতুর্থীতে উদ্বোধন হচ্ছে ত্রিধারা সম্মিলনী-সহ একাধিক নামী পুজোর। ত্রিধারার উদ্বোধন করবেন রাজস্থানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজকুমার শর্মা। |
এ বার এই পুস্তিকাটির প্রচ্ছদটি এঁকেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। ছবি: দেবাশিস রায় |
সল্টলেকের এ জি ব্লক ও দক্ষিণ শহরতলির সন্তোষপুর লেক পল্লির পুজোও শুক্রবার রাত থেকে দেখতে পাবেন মানুষ। উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনের পুজো উদ্বোধন করবেন দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীরা। অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার হাওড়া কমিশনারেটের পুজো গাইড উদ্বোধন করেন রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। |