এই শরতে ফুল নেই।
টানা বর্ষা আর জমা জলের প্রকোপে রাজ্যে ফুল চাষের প্রধান জেলাগুলো এ বার পুজোয় ফুলের যথেষ্ট যোগান দিতে পারছে না। ফলে ফুলের বাজারে যেন আগুন ধরে গিয়েছে। পুজো যত এগিয়ে আসছে ফুলের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গাঁদা, টগর, অপরাজিতা, দোপাটি, মোরগঝুঁটি, জবার মতো পুজোর ফুলের দাম চড়েছে অস্বাভাবিক রকম। দুর্গাপুজোয় ওই দাম আকাশ ছোঁবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরাও। তার একটা ইঙ্গিত মিলেছে বিশ্বকর্মা পুজোর সময়। যে গাঁদা (কুড়িটি মালার গোছ) ৬০-৭০টাকায় বিকোয়, বিশ্বকর্মা পুজোয় তার দাম উঠেছিল ১০০০টাকা পর্যন্ত।
বিশ্বকর্মা পুজোর সময় ফুলের চাহিদা মেটাতে বেঙ্গালুরু থেকে গাঁদা আর রজনীগন্ধা আমদানি করা হয়েছিল। পাঁশকুড়ার ফুলচাষি কার্তিক পাহাড়ি জগন্নাথঘাটে ফুলের ব্যবসাও করেন। কার্তিকবাবু বললেন, “কিন্তু মানের দিক থেকে সে ফুল আমাদের ধারেকাছে নয়। তাছাড়া বিমানে করে আমদানি করার জন্য ওই ফুল ঘরে রাখা যায় না। এক দিনেই নষ্ট হয়ে যায়।” আবার বিমানে করে আনার জন্য তার দাম পড়ে বেশি। ফলে যোগান কম থাকলেও দুর্গাপুজোয় বেঙ্গালুরু থেকে ফুল আসবে না। রাজ্য হর্টিকালচার কর্পোরেশনের এগজিকিউটিভ শিবাজি রায়ও বললেন, “বৃষ্টির বহর দেখেই বোঝা গিয়েছে ফুলের দাম এবার প্রচণ্ড বাড়বে। পদ্ম ফুলের দাম বাড়বে সবচেয়ে বেশি।” গোলাপ ফুলও এই বাজারে পিছিয়ে নেই। এখনই গোলাপের দাম এক টাকা করে। পুজো নাগাদ প্রতিটি গোলাপ তিন থেকে চার টাকা দামে বিকোবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। |
কার্তিকবাবু জানালেন, পুজোর এক দিন আগে থেকে বাজার ভয়ানক চড়তে শুরু করবে। বিশ্বকর্মা পুজোর সময়েই তার আঁচ পাওয়া গিয়েছে। পাঁশকুড়ার মেচগ্রামের হিমঘর থেকে আলু বেরিয়ে যাওয়ার পরে এখন ফুলের মজুত। ফুলচাষিরা পুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকে হিমঘরে ফুল মজুত করতে শুরু করেছে। মুলত গাঁদা, দোপাটি, টগর, মোতি (টগরের কুঁড়ি)-র মালা আর পদ্ম মজুত করছে। ওই সব ফুল হিমঘরে সাত দিনের বেশি রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ঝুড়ো ফুল বা পাঁপড়ি আবার একদিনের বেশি হিমঘরে থাকে না। পুজোর সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হিমঘর এখন ভরে উঠছে ফুলে।
দুর্গাপুজোয় পদ্ম একটা অপরিহার্য ফুল। কিন্তু খুব খারাপ অবস্থা পদ্ম ফুলের। অতিবর্ষণ এবং বারবার বন্যার হানায় পদ্ম বাগান ঢুবেছে কয়েকবার। পদ্মের কুঁড়ি আসতে তাই অস্বাভাবিক বিলম্ব হচ্ছে। গত কয়েক মাসে অনেক পদ্ম নষ্ট হয়েছে। পাঁশকুড়ার ফুলচাষি বরুণ জানা বললেন, “দুর্গাপুজোর বাজার ধরার জন্য অনেক ব্যবসায়ী আগে থেকে হিমঘরে পদ্মফুল মজুত করেছেন। কিন্তু হিমঘরে পনেরো কুড়ি দিনের বেশি পদ্ম রাখা যায় না। নষ্ট হয়ে যায়।
কালো দাগ ধরে যায়। তাতে ফুলের দামও কমে যায়।” এখন একশো পদ্মের দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। বরুণবাবুর ধারণা, পুজো নাগাদ একশো পদ্মের দাম হাজার টাকায় পৌঁছবে। তবে টাটকা পদ্মের দাম অনেক বেশি। এক একটা ১০টাকা করে। অন্যান্য বছর পুজোর মরসুমে ওড়িশা থেকে প্রচুর পরিমাণে পদ্ম আমদানি হয়। কিন্তু এই বছর ওড়িশাতেও বন্যা হওয়ায় সেই পদ্মও বাজারে আসবে না।
এ রাজ্যে ফুলের সবচেয়ে বেশি যোগান দেয় পাঁশকুড়া। অতিবর্ষণ এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ওই অঞ্চলে অন্তত চার বার বন্যার জল ঢোকার ফলে ফুল চাষের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছে। এই বছর পাঁশকুড়ার ফুলের যোগান অন্যান্য বারের তুলনায় নিতান্তই কম। নদীয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গাতেও ফুলের চাষ হয়। কিন্তু সেই ফুলের বেশিরভাগটাই স্থানীয় বাজারে যায়। কলকাতায় আনতে খরচ পড়ে যায় অনেক বেশি।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য কেবল পুজোর মরসুমেই ফুলের বাজার মার খেল না, ফুলের আকাল থাকবে শীতের মরসুমেও। শিবাজীবাবু বলেন, “কোনও জমিতে এখনও জল জমে রয়েছে। কোনও জমি থেকে সদ্য জল নেমেছে। ফলে শীতের মরসুমের ফুলের চাষও শুরু করা যায়নি।” |