হেল্থ স্কিমে ধরা পড়ে গেল হাসপাতালের বিলের ফাঁক
ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক ব্যক্তি। পাঁচ সপ্তাহে তাঁকে ১১ রকমের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। অভিযোগ, শুধু তারই বিল হয় আড়াই লক্ষ টাকা।
স্বাস্থ্য দফতরে কর্মরত ওই ব্যক্তি ‘স্টেট হেল্থ স্কিম’ বা ‘রাজ্য স্বাস্থ্য পরিকল্পনা’য় নাম নথিভুক্ত করিয়েছিলেন। তাঁর আড়াই লক্ষ টাকার অ্যান্টিবায়োটিকের বিল দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে ব্যাখ্যা চায় স্বাস্থ্য দফতর। যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে না-পেরে ক্ষমা চেয়ে বিলের টাকা কমিয়েছে ওই হাসপাতাল।
বেলেঘাটা কানেক্টরের কাছে, বাইপাসে অন্য এক নামী হাসপাতালে মূত্রনালীর সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হন স্বাস্থ্য বিভাগের আর এক কর্মী। তাঁর সিস্টেকটমি করা হয়। বিলে দেখা যায়, সিস্টেকটমির সঙ্গে ওই পুরুষ রোগীর ‘ক্ষতিগ্রস্ত জরায়ু’র চিকিৎসাতেও মোটা টাকা নেওয়া হয়েছে। হেল্থ স্কিমে চিকিৎসার টাকা মেটানোর সময়ে বিল পরীক্ষা করে হতবাক স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতালের কাছে জানতে চায়, কোনও পুরুষের জরায়ু কী করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে? এ ক্ষেত্রেও ভুল স্বীকার করে বিলের টাকা কমায় ওই হাসপাতাল।
কিন্তু পরে ফের ওই হাসপাতালই এক গলব্লাডারের রোগী, এক ক্যানসার রোগী ও দীর্ঘ কোমায় থাকা এক রোগীর চিকিৎসার বিলের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ স্বাস্থ্য দফতরের। প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা খরচের যথাযথ ব্যাখ্যা না-মেলায় ওই হাসপাতালের নাম হেল্থ স্কিম থেকে কেটে দেওয়া হয়েছে।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে হেল্থ স্কিম শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকারি কর্মীরা এর আওতায় আসতে পারেন। স্বাস্থ্যকর্তারা অভিযোগ করেছেন, বারবার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও হেল্থ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিলে পরপর নানা অসঙ্গতি, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি ধরা পড়ছে। যার জেরে হেনস্থা হচ্ছেন রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকেরা।
স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ
হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিক কমিটি ও ইনফেকশন কমিটি তৈরি
কেমোতে দামি ওষুধের কারণ চিকিৎসককে ব্যাখ্যা করতে হবে
প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিকের জেনেরিক নাম লিখতে হবে
একটির বেশি স্টেন্ট বসাতে হলে কার্ডিওলজিস্টের
সঙ্গে কার্ডিথোরাসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ লাগবে
স্বাস্থ্য দফতরের একাংশেই প্রশ্ন উঠেছে, এ ক্ষেত্রে না-হয় বিল পরীক্ষা করে গরমিল ধরছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কিন্তু স্কিমের বাইরেও অসংখ্য মানুষ ওই সব হাসপাতালে চিকিৎসা করান। তাঁদের বিলে একই রকম ভুল থাকলে বিচার করার কেউ থাকে না। তা ছাড়া, হেল্থ স্কিমে তুলনায় কম টাকায় পরিষেবা দিতে বাধ্য হয়ে হাসপাতালগুলি যে ওই টাকা অন্য রোগীদের থেকে যে উসুল করছে না, তারই বা নিশ্চয়তা কী?
স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, বাইপাসের একটি হাসপাতালে এক রোগীর বিলে দেখানো হয়েছে, তাঁর চিকিৎসায় রোজ ২০টি গ্লাভস, ৪টি মাস্ক ও ৪টি করে ইন্ট্রা ভেনাস সেট লেগেছে। যা অবাস্তব বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। আর এক হাসপাতাল সাধারণ ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ২৫ হাজার টাকার বিল ধরিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, হেল্থ স্কিমে থাকা বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল যক্ষ্মার চিকিৎসায় সরকার স্বীকৃত ডট্স প্রক্রিয়া মানছে না। কোথাও আবার ক্যানসার রোগীর কেমোথেরাপিতে অযথা অসম্ভব দামি ওষুধ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বাইপাসের যে হাসপাতালের বিরুদ্ধে আড়াই লক্ষ টাকার অ্যান্টিবায়োটিকের বিল করার অভিযোগ উঠেছে সেখানকার সিইও স্বরাজব্রত পুরকায়স্থর সাফাই, “কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অনেক অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। ওষুধ বদলাতে হয়। তাই হয়তো অনেক রকম ওষুধ দেওয়া হয়েছে।” তবে ভুল স্বীকার করে বিলের টাকা কমালেন কেন? এর অবশ্য যথাযথ উত্তর মেলেনি। চিকিৎসা বিলের ব্যাখ্যা দিতে না-পারায় বেলেঘাটা কানেক্টারের কাছে যে হাসপাতালের নাম হেল্থ স্কিম থেকে বাদ পড়েছে, তার ডিরেক্টর ভি আর রামাননের কথায়, “কম্পিউটারে বিল তৈরির সময়ে ভুলবশত কিছু সংখ্যা টাইপ হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্যভবন ও মহাকরণে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যে আমাদের নাম আবার হেল্থ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.