শহরের বুক বরাবর মহানন্দা। দু’পাশে গজিয়ে উঠেছে বসতি, খাটাল। কর্মব্যস্ত, বাণিজ্য নগরী শিলিগুড়ি আজ দূষণে ভারাক্রান্ত। সচেতনতা বাড়াতে বিস্তর আলোচনা, নির্দেশ থাকলেও তা থমকে। বাড়ছে দূষণ। দার্জিলিং, গ্যাংটকের মতো প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জন করেছে শিলিগুড়িও। তাই এবার দেবীবন্দনার ‘থিমে’ উঠে এসেছে দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কাজে আরও সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়। উদ্যোগী হল শক্তিগড় সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। দবী এবার দূষণ-নাশিনী। ক্লাবের পুজো এবার ৬০ বছর পা দিল। ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা কৌশিক দত্ত বলেন, “শুধু আমাদের এলাকা নয়। গোটা শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকাকে পরিবেশ বান্ধব হিসাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। আর সেই জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। তাই আমাদের দেবী দূষণনাশিনী।” আগাগোড়া চারভাগে ভাগ করা হয়েছে ক্লাবের মণ্ডপকে। চারটি থিমে। পুরোভাগে দেবী, ‘দূষণনাশিনী’। মণ্ডপের মূল অংশ জুড়ে মহানন্দা নদী এবং তাঁর দূষণ। বস্তি, মানুষ, গরু, মোষ ও বাছুর, আবর্জনার মাধ্যমে মডেল তৈরি করা হয়েছে। এবং এর থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। তাও স্লোগান, মডেলের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে অসম বাংলার মেলবন্ধন করা হচ্ছে নদীর মাধ্যমেই। মডেল নদীর পাশে মঞ্চে থাকবেন অসমের ২৫ জনের বিহুর দল এবং বাংলার লোকগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীরা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান হবে। অন্যভাগে রয়েছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিয়ে প্রচার, প্ল্যাকার্ড। ক্লাব সদস্যরা জানাচ্ছেন, দরজা, জানলা, টেবিল টেয়ার, ড্রাম- জলের পাইপের মত বহু ক্ষেত্রেই প্লাস্টিক আজও অপরিহার্য। রিসাইকিলিং করা যায় এমন প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার করাই যেতে পারে। কিন্তু ক্যারিবাগ অবশ্যই বর্জনীয়। মডেল, প্ল্যাকার্ড, অডিও-ভিস্যুয়ালের মাধ্যমে তাই তুলে ধরা হচ্ছে ক্লাবের মণ্ডপে। আর পুরসভার সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের প্রচার বাড়তে যত্রতত্র আবর্জনা, জঞ্জাল না ফেলা, নোংরা বাঁশিওয়ালা সাফাইকর্মীকে দেওয়া। আলাদা পাত্রে পচনশীল জঞ্জাল রাখা। সবই মডেলের মাধ্যমে থাকছে মণ্ডপের আরেকটি প্রান্তে। ক্লাব সদস্যদের পরিবেশ বান্ধব এই ভাবনা বাস্তবরূপ দিচ্ছেন নবদ্বীপের শিল্পী পঞ্চানন্দ দেবনাথ এবং তাঁর সঙ্গীরা। ক্লাবের পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ধীরাজ দেবনাথ, বিশ্বজিৎ বসু’দের আশা, “সরকারি বেসরকারিভাবে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার কাজ হয়। আমাদের এই সার্বিক প্রচেষ্টা শহরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।” |