মাওবাদী নিয়ে বৈঠক মহাকরণে
অনন্ত ধৈর্য নয়, কাল সুজাতদের বলবেন মমতা
লোচনার দিকে তাকিয়ে মাওবাদী মোকাবিলায় বেশি সময় নষ্ট করতে রাজি নয় সরকার। কাল, বৃহস্পতিবার মহাকরণে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি বুঝিয়ে দেবেন, জঙ্গলমহলে সাম্প্রতিক হানাহানির পরে সরকার অনন্ত কাল হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।
সোমবারই যৌথ বাহিনীর অভিযানের সপক্ষে মন্তব্য করেছিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। মঙ্গলবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজি-র মেদিনীপুর সফরে গিয়ে বলে এসেছেন, “কিছু কিছু জায়গায় অভিযান চালানো হবে।” সুতরাং মাওবাদী প্রশ্নে সরকার যে ক্রমশ কড়া হতে চলেছে, সেটা প্রকট। মহাকরণ সূত্রের খবর, জঙ্গলমহলে এখনই যৌথ বাহিনীর লাগাতার অভিযান পুরোদস্তুর শুরু করার ব্যাপারে মনস্থির করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সরকার ক্রমশ কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলার দিকেই এগোবে বলে ইঙ্গিত মিলছে।
এক মুখপাত্র জানান, মমতা তাড়াহুড়ো করতে চান না ঠিকই। তবে কাল, বৃহস্পতিবার মহাকরণে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক রয়েছে। সেখানে মমতা বুঝিয়ে দেবেন, আলোচনার পথ চেয়ে সরকার আর আর বেশি সময় নষ্ট করতে রাজি নয়। মমতার দিক থেকে কড়া বার্তার আশঙ্কাতেই ‘এখনই আলোচনার পথ বন্ধ না করা’-র জন্য ইতিমধ্যে বার্তা পাঠিয়েছেন মধ্যস্থতাকারীদের অন্যতম প্রতিনিধি সুজাত ভদ্র। গত সপ্তাহেই সুজাতবাবুরা জঙ্গলমহলে গিয়ে মাওবাদীদের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সেই আলোচনার কথা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরবেন তাঁরা।
মঙ্গলবারই জঙ্গলমহলের চার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম জানিয়ে দিয়েছেন, “কিছু কিছু জায়গায় অভিযান চালানো হবে।” চার জেলার পুলিশ সুপারদের এই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি নিজে এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। প্রশাসনের একটি অংশ মনে করছে, মাওবাদীরা ফের খুন করতে শুরু করায় তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে। সম্প্রতি পরপর কয়েকটি খুনের পরে প্রয়োজনমাফিক তল্লাশি চালানোর পক্ষে মত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সবুজ-সঙ্কেত পেয়েই এ দিন জঙ্গলমহলের কিছু জায়গায় অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্রসচিব।
মহাকরণ সূত্রের খবর, দিন কুড়ি আগে জঙ্গলমহলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় রাজ্য পুলিশের কর্তাদের অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন সরকার যেমন মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কথা বলে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করছে করুক, পাশাপাশি এলাকা ধরে ধরে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হোক। ওই পুলিশ কর্তাদের যুক্তি ছিল, মাওবাদীরা জঙ্গলমহলের শিক্ষক, পঞ্চায়েতকর্মী ও সরকারি কর্মীদের কাছ থেকে জোর করে ‘লেভি’ আদায় করছে। ওই টাকায় অস্ত্র কেনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রায় রোজ রাতে মিছিল-মিটিং করে নিজেদের আধিপত্য বাড়িয়ে চলেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে মাওবাদীদের পুরোপুরি ‘ফাঁকা জমি’ দিয়ে দিলে পরে সামলানো সমস্যা হবে। সেই কারণে নির্দিষ্ট সূত্র ধরে এলাকাভিত্তিক অভিযান শুরুর পক্ষে সওয়াল করেছিলেন ওই পুলিশ কর্তারা। স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজি এ দিন যে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, তার পিছনে সেই চিন্তাভাবনাই কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “আলোচনার পথ বন্ধ হলে তার পরেই যৌথ বাহিনী কাজ করতে পারে।” সরকারের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার বলেন, “এম কে নারায়ণন শুধু এ রাজ্যের রাজ্যপালই নন। তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রাক্তন প্রধানও। পরিস্থিতির যথেষ্ট বিশ্লেষণ করেই তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। সেটা বুঝেই সরকার তাঁর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে।” স্বভাবতই মহাকরণে যে প্রশ্নটা এখন ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটা হল, রাজ্য কি জঙ্গলমহলে যৌথ বাহিনীর লাগাতার অভিযানের পথেই যাবে?
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া পুলিশ-জেলার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মেদিনীপুরে আসেন স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজি। মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে চার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এডিজি (আইবি) বাণীব্রত বসু, আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) জুলফিকার হাসান, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বিনীত গোয়েলও। ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তারাও। সেই বৈঠকে জঙ্গলমহলে লাগাতার অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন মহাকরণের কর্তারা। এ জন্য রাজ্য প্রশাসনের কাছে কী ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা প্রয়োজন, তা-ও জানতে চান তাঁরা। অভিযান পরিচালনার জন্য কয়েক জন অভিজ্ঞ আইপিএস অফিসারের প্রয়োজনের কথা জানান পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপারেরা। বিধানসভা ভোটে রাজ্যে পালাবদলের পরে নতুন সরকারের নির্দেশে যৌথ বাহিনীর অভিযান কার্যত বন্ধ রয়েছে। কোবরা-সহ কেন্দ্রীয় বাহিনীর বেশ কয়েক কোম্পানি জওয়ান ইতিমধ্যে ফিরেও গিয়েছে। সেই সুযোগেই মাওবাদীরা নিজেদের সংগঠিত করে মাসখানেক ধরে ফের খুন-সন্ত্রাস শুরু করেছে। শাসক দলের একাধিক নেতা ইতিমধ্যেই খুন হয়েছেন। গত রবিবার সন্ধ্যায় জনবহুল দহিজুড়ি চকে খুন হন ঝাড়খণ্ডী আন্দোলনের অন্যতম নেতা বাবু বসু। ওই দিনই বিনপুর গ্রামীণ হাসপাতালের কাছে উদ্ধার হয় গুলিতে ঝাঁঝরা এক যুবকের দেহও। মঙ্গলবার দেহটি শনাক্ত হয়েছে। কাঁকো অঞ্চলের জোস্না গ্রামের এই যুবক মঙ্গল মুর্মু আগে মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেই পুলিশের দাবি। তবে বছর খানেক ধরে রাজনীতির সংস্রব ত্যাগ করে চাষবাস নিয়েই ছিলেন। তাদের সম্পর্কে নানা তথ্য ‘ফাঁস’ করে দিতে পারেন সন্দেহে মঙ্গলকে মাওবাদীরাই খুন করেছে বলে দাবি পুলিশের। তৃণমূলের আরও অনেক নেতা-মন্ত্রীও মাওবাদী হামলার নিশানা হতে পারেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। তবে স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, কোবরা-সহ বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইলে পেতে অসুবিধা হবে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.