দেবীর মাটির কাঠামোর উপরে একের পর এক পাটকাঠির টুকরো বসিয়ে একমনে কাজ করে চলেছেন শিল্পী। প্রায় আড়াই মাস ধরে দিনরাত চলছে কাজ। তবু চোখেমুখে ক্লান্তির চিহ্ন দেখতে পাওয়া গেল না। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির আমড়াতলা গ্রামের বাসিন্দা উমাপ্রসাদ দাসের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই।
এ বছর কাকদ্বীপের একটি ক্লাবের কাছ থেকে পাটকাঠির প্রতিমা তৈরির বরাত পেয়েছেন উমাপ্রসাদ। প্রতিমা থেকে সাজসজ্জা সবই হচ্ছে পাটকাঠির। গত আড়াই ধরে শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। কাঠামোয় খড় বেঁধে তার উপরে মাটির প্রলেপ চাপিয়ে তার পরে চলছে নানা আকারের মাপে কাটা পাটকাঠির টুকরো বসানোর কাজ। যদিও দূর থেকে দেখলে পাটকাঠির প্রতিমা বলে বোঝা মুশকিল। এবং এই ভ্রান্তি অবশ্যই শিল্পীর নিপুণ হাতের সৌজন্যে। ছোট থেকেই রঙ-তুলির প্রতি প্রচণ্ড টান। কোথাও রঙ পেলেই তা মেলে ধরতে খুঁজে ফিরতেন সাদা কাগজ। ক্লাস এইট পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার পরে আর কৃপা করলেন না লক্ষ্মীদেবী। ছবি আঁকার উদগ্র বাসনা নিয়েই সুভাশ্রী গায়েন নামে এক শিল্পীর কাছে গেলেন। তালিম শুরু হল। তবে ছবি আঁকার নয়। মাটি দিয়ে মূতি গড়ার। তালিমের পাশাপাশি চলল নানা দেবীর মূর্তি তৈরি। সেইসঙ্গে জাগল নানারকম জিনিস দিয়ে প্রতিমা তৈরির ইচ্ছা। ১৯৯৫ সালে প্রথম তৈরি করলেন দেশলাই কাঠির দুর্গা। ধীরে ধীরে কাচের চুড়ি, নারকেলের ছোবড়া, নাইলন দড়ি, নানরকমের ফলের প্রতিমা বেরিয়েছে উমাপ্রসাদের হাত থেকে। পেয়েছে মানুষের প্রশংসা। ছড়িয়েছে নাম। ডাক এসেচে অন্য জেলা থেকেও। এ বছর পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার একটি কারখানার জন্য ৩৫ হাজার টাকায় গড়ে দিয়েছেন বাঁশের চ্যঁচারির বিশ্বকর্মা।
চিরাচরিত মাটির প্রতিমা থেকে বেরিয়ে শিল্পীর এমন পরীক্ষানিরীক্ষার কারণ?
উমাপ্রসাদের কথায়, “মাটির উপর শোলার সাজের প্রতিমা চিরাচরিত ছবি। এর থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করার ভাবনা বরাবরই তাড়িয়ে বেড়ায় আমাকে। তা থেকেই নানা রকম মাধ্যম দিয়ে প্রতিমা তৈরির শুরু।” |