বর্ধমান থেকে বিজয় দাস আর তাঁর চার বন্ধু তর্পণ করতে নবদ্বীপে এসেছিলেন। একে অসম্ভব ভিড়। রানির ঘাটে পা ফেলার জায়গা নেই। কোথায় তর্পণ করবেন। ঘাটের উপর ঘুরে দেখছিলেন তাঁরা। ধুতি পরনে, কাঁধে উত্তরীয় এক মধ্যবয়স্ক পুরোহিত ছুটে এসে মাথা পিছু ২০ টাকা করে ‘দর’ ঠিক করে ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গেই আরও এক জন হুমড়ি খেয়ে পড়ে ‘দর’ দিলেন মাথা পিছু ১০ টাকা। একে তো অর্ধেক, সঙ্গে ভাল জায়গাও মিলবে এই আশ্বাসে বিজয়বাবুরা দ্বিতীয় জনের সঙ্গেই চললেন।
সকাল ৮টা থেকেই শহরের প্রায় সব ক’টি গঙ্গার ঘাটের সামনে থিকথিকে ভিড়। সামনের রাস্তায় গাড়ির ভিড়ে বেজায় জানযট। পুণ্যভূমি নবদ্বীপের এই হাল এ বারই প্রথম নয়। পুরোহিতদের এই হাঁফাতে হাঁফাতে এক ঘাট থেকে অন্য ঘাট ছুটে বেড়ানোও নতুন নয়। কিন্তু ভিড় ছাপিয়ে এই নবদ্বীপেই ভেসে ওঠে শুদ্ধ মন্ত্রোচ্চারণ। তার টানেই যে প্রতি বছর দেবীপক্ষের এই প্রথম দিনটিতে এখানেই তর্পণ করতে আসেন, তা জানিয়ে দেন মেদিনীপুর থেকে বীরভূমের মানুষ। |
পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “তর্পণ আসলে শিকড়ের সন্ধান। নিয়ম করে পিতৃপুরুষকে স্মরণ মানে উৎস মুখে ফিরে যাওয়া। এটা বোঝা যে, তুমি একা কেউ নও। তোমার অতীত রয়েছে। সামনে ভবিষ্যৎ। তার জন্যও নিজেকে ও পরিবারকে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। এই সম্পূর্ণ উপলব্ধিটিই তর্পণের কথা।” এই সব আচারেই সংস্কৃত ভাষাটির মতো সুপ্রাচীন এই দেশের সংস্কারও এখনও আম জনতার মধ্যে থেকে যেতে পারে। প্রবীণ পাঠক গোরাচাঁদ ভট্টাচার্য বলেন, “পুরনো মাটির মায়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রাণের সম্ভাবনা। ভরা বর্ষার পরে শরৎ কালে তাই তর্পণের সময় স্থির করা হয়েছে।”
শহরের ব্যবসায়ীরাও বলেন, পুজোর আবহাওয়াটাই তৈরি হয়ে যায় মহালয়ার দিন থেকে। যার যেটুকু কেনাকেটা বাকি রয়েছে, তাঁরা তা এ বার দ্রুত সারতে থাকেন। পুজোর উদ্যোক্তারা বাকি মণ্ডপের কাজ শেষ করে ফেলতে তাড়া দেন। শিল্পীরা শেষ তুলির টান দেন প্রতিমার গায়ে।
এ বার উৎসবের সময়। |