|
|
|
|
‘ডাইন’ তকমা দিয়ে বৃদ্ধা খুন গোয়ালতোড়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গোয়ালতোড় |
দু’দিন আগে মারা গিয়েছে চার মাসের ছেলে। সে জন্য প্রতিবেশী বৃদ্ধাকে ‘ডাইন’ ঠাওরালেন এক যুবক। তারপর নিজেই নৃশংস ভাবে খুন করলেন বৃদ্ধাকে। হাত-পা-ধড়-মুণ্ডু আলাদা করে ফেলে দিলেন জঙ্গলে। ঘটনাস্থল গোয়ালতোড় ব্লকের হামাড়গোড়া গ্রাম। পিয়ারি মুদি (৬২) নামে ওই বৃদ্ধাকে গ্রামেরই বিশ্বজিৎ মুদি খুন করেছে বলে অভিযোগ। ঘটনার পর থেকে গ্রামছাড়া বিশ্বজিৎ। বিডিও বিক্রম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হামাড়গোড়ার এক বৃদ্ধাকে ডাইন সাব্যস্ত করে গ্রামেরই এক যুবক খুন করেছে।” ডিএসপি (অপারেশন) অনীশ সরকার জানান, অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
গোয়ালতোড় শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে হামাড়গোড়া। বছর বত্রিশের বিশ্বজিৎ পেশায় চাষি। তাঁর চার মাসের ছেলে মারা যায় গত রবিবার। সপ্তাহ খানেক আগে শিশুটির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। প্রথমে গোয়ালতোড় ব্লক হাসপাতালে ও মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয় তাকে। রবিবার মেডিক্যালে মারা যায় সে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ছেলের মৃত্যুর পরে দু’দিন চুপচাপই ছিলেন বিশ্বজিৎ ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মী। তবে মঙ্গলবার সকালে বিশ্বজিৎ গ্রামের কয়েকজনকে জানান, তাঁর ছেলের মত্যুর জন্য ‘ডাইন’ পিয়ারি মুদিই দায়ী। সকাল ১০টা নাগাদ পিয়ারিদেবী যখন বড় বৌমা পুষ্পকে নিয়ে হামাড়গোড়া জঙ্গলে পাতা কুড়োতে গিয়েছিলেন, তখনই ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর উপর হামলা চালান বিশ্বজিৎ। মাথা, হাত-পা কেটে পিয়ারিদবীকে খুন করা হয়। পুষ্পদেবী বলেন, “জঙ্গল থেকে ফিরে মাকে নিয়ে পুজোর কেনাকেটা করতে যাওয়ার কথা ছিল। পাতা কুড়োতে কুড়োতে সেই কথাই বলছিলাম। আচমকাই আমার চোখের সামনে মাকে খুন করে দিল। কিছুই করতে পারলাম না।” পুষ্পদেবীই গ্রামে ফিরে ঘটনার কথা জানান। ততক্ষণে অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ সপরিবার গ্রাম ছেড়েছেন। পুলিশ এসে ঘন্টা দুয়েকের চেষ্টায় দেহাংশগুলি উদ্ধার করে। জঙ্গল থেকে আধ কিলোমিটার দূরে মেলে বৃদ্ধার মুণ্ডুটি। পিয়ারিদেবীদের স্বচ্ছল পরিবার। স্বামী গৌর মুদি চাষ করেন। তিন ছেলের মধ্যে বড় কাঠমিস্ত্রি, মেজ পার্শ্বশিক্ষক ও ছোট পোলট্রিতে কাজ করেন। বছর বারো আগে গ্রামের অনেকে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরও পিয়ারিদেবীকে কয়েকজন ‘ডাইন’ ঠাওরান। হামলা হয় বাড়িতে। এ বার সেই কুসংস্কারের বশেই প্রাণ হারালেন ওই বৃদ্ধা। |
|
|
|
|
|