৭৯ বছর পূর্ণ করে ৮০-তে পা দিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। জন্মদিনটা আকাশপথেই কাটল। নিউ ইয়র্ক থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট আসার পথে বিমানে কাটা হল কেক। সাংবাদিকদের সঙ্গে বেশ জমিয়ে আড্ডাও মারলেন মনমোহন। বললেন, জন্মদিনটা ২৬-শেই কি না, তা নিয়ে নাকি ধন্দ আছে।
মৃদুভাষী বলেই এমনিতে পরিচিত তিনি। আবেগের বহিঃপ্রকাশ খুব একটা দেখা যায় না তাঁর। কিন্তু এ দিন একান্তে কথা বলার সময় বেরিয়ে এলেন এক অন্য মনমোহন। স্মৃতিমেদুর, একটু যেন উদাসও! যিনি বলেন, “আমার জন্মদিন আমি কখনওই পালন করিনি। আসলে আমার জন্মদিনটা যে কবে সেটা নিয়েই আমি ধন্দে ছিলাম।” |
ধন্দ কেন? একান্ত আলাপচারিতায় মনমোহন বলে চলেন, “আমার জন্মানোর ঠিক পরপরই আমার মায়ের মৃত্যু হয়। আমি ঠাকুমার কাছে মানুষ হই। পরে বাবা আর আত্মীয়স্বজনরা অনেক হিসেবনিকেশ করে বলেছিলেন, ২৬-এ নাকি আমার জন্মদিন। তার পর থেকে সে ভাবেই কাগজে-কলমে আমার জন্মদিনটা ২৬ তারিখই হয়ে
রয়েছে। কিন্তু সেটা ঠিক কি না, আমি নিজেও জানি না।”
টুজি-মামলা, অর্থনীতির হালহকিকত, বৈদেশিক সম্পর্কের ভারী ভারী কথা নয়। ছোটবেলার গল্প বলছিলেন মনমোহন। দরিদ্র শিখ পরিবারের সন্তান। অবিভক্ত পঞ্জাবে জন্ম তাঁর। সেই অঞ্চলটি পরে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। দেশভাগের পর বাবা এ পারে চলে আসেন। রাস্তায় রাস্তায় ফল বিক্রি করতেন তিনি। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছিলেন। ‘ছেলে’ অবশ্য কোনও দিন পরীক্ষায় প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি। বাড়িতে আলো ছিল না বলে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত রাস্তার আলোয় লেখাপড়া করেছেন। অল্প আলোয় পড়তে পড়তে ছোট থেকেই দৃষ্টিশক্তি কমে গিয়েছিল। একটা চোখে এখন তো দেখতেই পান না। |
পরবর্তী জীবনে কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ডের কৃতী ছাত্র। নামী অধ্যাপক, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এবং জওহরলাল নেহরুর পর প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর দু’বার ক্ষমতায় এসেছেন। সেই মনমোহন সিংহকে জন্মদিনে হইচই করে পার্টি করতে কেউই দেখেনি কখনও।
এমনকী বাড়িতে যখন থাকতেন তখনও, নয়। আকাশের মাঝে আশিতে পা দিয়ে বললেন, “আকাশপথে এর আগেও জন্মদিন কেটেছে আমার।” কিন্তু এত নস্টালজিক মনমোহনকে এর আগে আকাশপথে দেখা গিয়েছে কি? |